ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দলে ভাঙনের পরও ক্ষমতার জন্য আন্দোলন চলবে: ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
দলে ভাঙনের পরও ক্ষমতার জন্য আন্দোলন চলবে: ইমরান খান

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জোর দিয়ে বলছেন, তার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের অনেক সিনিয়র নেতার পদত্যাগের পর ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যারা দল ছেড়েছে, তাদের জায়গায় তরুণ রাজনীতিবিদদের বসানো হবে।

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এর জেরে শুরু হয়েছিল দেশব্যাপী এক বিক্ষোভ। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে তার প্রতি জনসমর্থন কমে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তার পদত্যাগের জন্য খান সেনাবাহিনীর চাপকে দায়ী করেছেন।

বিবিসির পাকিস্তান সংবাদদাতা ক্যারোলাইন ডেভিসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ৯ মের সহিংসতার পর থেকে তিনি এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তার জন্য ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি অনুসরণ করছেন।

সাক্ষাৎকারে খানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে দল চালাবেন? সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, প্রথমেই দলের শূন্য পদে নিয়োগ দেব, এবং তরুণ নেতাদের সামনের কাতারে আনব। এদেরও (নতুন নেতাদের) আটক করা হবে বলে আমার আশঙ্কা। এটাও হতে পারে যে তারা আমাকেও জেলে ঢোকাবে।

পিটিআই বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ভোট-ব্যাংক হারালে আমার অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে।  

তিনি বলেন, আপনি ভাবতে পারেন যে এটি (বর্তমান পরিস্থিতি) আমার জন্য একটি বড় সঙ্কট, কিন্তু আমি তা মনে করি না। আসলে আমরা সামরিক আইনের সম্মুখীন হচ্ছি। আমি ভাবছি তারা এসব থেকে কী পেতে চায়। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানগুলো দেশের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করছে। আমি জানতে আগ্রহী, আমাদের বাতিল করে দেওয়া হলে তাতে দেশের কী উপকার হবে।  

ইমরান খান জানান, সরকার ও প্রশাসনের মনোভাব জানতে তিনি একটি সংলাপ করতে চান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন যে তিনি অতীতে কখনও তার সমর্থকদের সঙ্গে এমন কোনো কথা বলেননি, যার ফলে ৯ মের মতো ঘটনা ঘটতে পারতো।

আপনার শাসনামলেও কি কয়েকজন বিরোধী নেতা কারাগারে ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সেই পরিস্থিতির কোনো তুলনা চলে না। একদমই না। আমাদের আমলে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছে ক্ষমতায় আসার আগে। সেই মামলাগুলো আমাদের সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা করিনি।

তিনি বলেন, অন্যদিকে, গত কয়েক মাসে আমার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। আপনাকে সত্যটা জানতে হবে। আমাদের সরকার তাদের (বিরোধীদের) বিরুদ্ধে মামলাগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল। এগুলো ছিল দুর্নীতির মামলা, যেগুলো তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দায়ের করা হয়েছিল।  

৯ মের ঘটনা নিয়ে ইমরান খান বলেন, পুলিশ ও সেনা ভবনে হামলাকারী জনতা পিটিআইয়ের অংশ ছিল, তা ঠিক নয়। এ নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে ইমরান খান ব্যাখ্যা করেন, গত ৭০ বছর ধরে সেনাবাহিনী পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতা ভোগ করেছে। দেশ শাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সম্পর্ক নেই - এমনটি ভাবা মানে বোকার স্বর্গের বাস করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসির উর্দু বিভাগের সংবাদদাতা আহমেদ এজাজ জানান, ৯ মের ঘটনাগুলো স্পষ্টতই তেহরিক-ই-ইনসাফের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে এবং দলটি ভেঙে পড়ার অবস্থায় রয়েছে।

তাদের মতে, তেহরিক-ই-ইনসাফ’র জনপ্রিয়তার কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দলে যোগ দেওয়া ‘ইলেক্টেবল’ [নির্বাচনে জিততে পারেন এমন] রাজনীতিবিদ -যেমন, আসাদ উমর, শিরিন মাজারি, আমির কায়ানি, ইমরান ইসমাইল, সাইফুল্লাহ নিয়াজি বা আলী জাইদির মতো নেতাদের দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা পিটিআইয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি  হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, এমন কী ধরনের চাপ ছিল, যার ফলে দীর্ঘদিনের নেতারা মনোবল হারাতে বাধ্য হয়েছেন? কেন ইলেক্টেবল  এবং দলের মুখ হিসেবে পরিচিত অন্তত ৮৭ জন নেতা দ্রুতগতিতে দল থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ জাফর আহমদ এই নেতাদের ওপর চাপ ও পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন ভিন্নভাবে। তার মতে, যারা পিটিআইয়ের দীর্ঘদিনের কর্মী এবং যারা দল ছাড়ছেন তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একদল হল সেই সব লোক, যারা ইমরান খানের আচরণে ক্ষুব্ধ। দল ছাড়ার পর এই নেতারা এখন যে বিবৃতি দিচ্ছেন, তা থেকে বোঝা যায় যে, দল ছাড়ার জন্য কোনো ধরনের চাপ তাদের ওপর ছিল না। স্পষ্টতই তারা ইমরান খানের আচরণে বিরক্ত ছিলেন।  

আরেকটি দল হলো যারা ৯ মের ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন – যেমন, আবরার-উল-হক – এরা তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইমরান খান পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তারা সেই স্বপ্নকে অর্জন করতে চাইছিলেন। কিন্তু তারা জানতেন না যে সেই স্বপ্ন অর্জনের জন্য তাদের একটি তথাকথিত বিপ্লবের পথেও হাঁটতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।