বিজ্ঞানীরা এবার আরও সুস্পষ্ট করে বলেছেন, আবহাওয়া এতো বৈরী রূপ নিচ্ছে যে-- ২১০০ সালের দিকে কেবল ইউরোপেই প্রতিবছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে, পরিবেশের বিরূপ আচরণে। মৃত্যুর এ সংখ্যাটা বর্তমান সময়ের চেয়ে ৫০ গুণেরও বেশি।
ইউরোপিয়ান কমিশনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্র গবেষণা শেষে দিয়েছে এই হুঁশিয়ারি। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘দ্য লেনসেট প্লেনেটারি হেলথ’ জার্নাল।
গবেষণায় বলা হয়েছে, চলতি শতকের শেষে আবহাওয়াজনিত মৃত্যুর ৯৯ শতাংশ ঘটবে তাপদাহের কারণে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপের দক্ষিণভাগ। থাকবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহও।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কার্বন নিঃসরণ যদি কমিয়ে না আনা হয়, চরম আবহাওয়া মোকাবেলার পদ্ধতিগুলো যদি উন্নত করার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এর কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে বিশ্বকে উদ্বিগ্নত হতে হবে।
গবেষণা অনুসারে চরম আবহাওয়াজনিত কারণে যেসব প্রভাব পড়তে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো--
১. বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরপ্রতি ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হলে ২০৭১ সাল থেকে ২১০০ সালে নাগাদ বছরপ্রতি মৃত্যু হবে ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষের।
২. ২১০০ সালের মধ্যে ইউরোপে আবহাওয়ার বিপর্যয়ের প্রভাব পড়বে প্রতি ৩ জনের মধ্যে ২ জনের ওপর। যেখানে শতকের শুরুতে এ পরিসংখ্যান ছিল প্রতি ২০ জনে ১ জন।
৩. উপকূলীয় এলাকায় বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। শতকের শুরুতে বছরপ্রতি প্রাণহানির সংখ্যা ৬ হলেও শতকের শেষ বছরগুলোতে হবে ২৩৩।
ইউরোপিয়ান কমিশনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্র জানায়, তারা সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডসহ ২৮টি ইউরোপীয় দেশের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। গবেষকরা সাতটি মারাত্মক আবহাওয়া যেমন- তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, দাবানল, খরা, নদী, সামুদ্রিক বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কাজ করেন।
এরমধ্যে ছিল ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জনজীবনের ঝুঁকি সংক্রান্ত ফলাফল এবং কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও স্থানান্তরে ভূমিকা রাখে তার বিশ্লেষণও।
গবেষণাটির লেখক গিয়োভাননি ফজেরি বলেছেন, একবিংশ শতকের মানুষদের স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমেই এর বিপদজনক প্রভাবটি সমাজে দিন দিন বাড়বে।
তিনি বলেন, যদি দ্রুততার সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে শতকের শেষ দিকে চরম আবহাওয়ায় প্রতিবছর ৩৫’শ লাখ ইউরোপীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লন্ডন স্কুল অব হায়েজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক পল উইলকিনসন বলেন, গবেষণাটি বিরূপ আবহাওয়ার আরেকটি আগাম বার্তা। শিল্পায়নের নামে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ যদি কমানো না যায়, তার তিক্ত ও ভয়ঙ্কর ফলাফলের জন্য মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
জিওয়াই/এইচএ/