ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কী ঘটছে ভেনেজুয়েলায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
কী ঘটছে ভেনেজুয়েলায়? ভেনেজুয়েলার রাস্তায় রাস্তায় এখন সামরিক বাহিনীর টহল চলছে

বিপ্লবী নেতা হুগো চাভেজের প্রয়াণের পর থেকেই অস্থিতিশীল লাতিন আমেরিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ ভেনেজুয়েলা। বছর চারেক আগে প্রয়াত হওয়া চাভেজের অনুসারী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরের পেছনে সশস্ত্র বাহিনীর ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকলেও দিন শান্তিতে যাচ্ছে না তার। এপ্রিলের পরই দেশটি পড়েছে সবচেয়ে বড় সংকটে। সবশেষ সেনাবাহিনীর পক্ষত্যাগী এক ক্যাপ্টেন বর্তমান প্রেসিডেন্টের ‘বিরুদ্ধে অবস্থান’ ঘোষণা করে একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছেন। এর আগেই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কলম্বিয়া সীমান্তবর্তী ভ্যালেন্সিয়া শহরে ওই ক্যাপ্টেনের অনুসারীদের হামলায় অন্তত দু’জন নিহত এবং একজন আহতও হয়।

এই অবস্থাকে ‘ক্রান্তিকাল’ বলে আখ্যা দিচ্ছে ভেনেজুয়েলার সংবাদমাধ্যম। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমও বলছে ‘সংকটকাল’।

যদিও সরকারের তরফ থেকে পরিস্থিতি ‘শান্ত’ বলে দাবি করা হচ্ছে। আবার ক্ষমতাসীনরাই বলছে,  সামরিক বাহিনী ওই হামলার তাৎক্ষণিক কার্যকর জবাব দিয়েছে এবং উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

সোমবার (৭ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, রোববার (৬ আগস্ট) ভ্যালেন্সিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে ওই হামলা চালায় ২০ জন। এতে দু’জন নিহত ও একজন আহত হয়। হামলার পর সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে একজন ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট। কিন্তু অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে পালিয়ে যায় ১০ জন।

হামলাকারীরা সেই ক্যাপ্টেনের অনুসারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যিনি রোববারই সামরিক বাহিনীর পোশাক পরিহিত আরও বেশ ক’জনকে নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় দাবি করেন, তিনি সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং তারা ‘খুনি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রুখে দাঁড়িয়েছেন’। যদিও সেই ক্যাপ্টেনের পাশে থাকা অন্যরা সামরিক বাহিনীরই সদস্য কিনা- এ নিয়ে সন্দিহান বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

মাদুরো ওই হামলার ঘটনার পর দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালিয়েছে। এতে জড়িত ১০ জনকে খুঁজতে অভিযানে নেমেছে সামরিক বাহিনী। তাদের পাকড়াও করা গেলেই স্পষ্ট হবে, কারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। ’ অবশ্য ভাষণে তিনি এই ‘অস্থিতিশীলতা ও দুর্বৃত্তপনার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়ায় বসবাসরত সরকারের সমালোচক অংশ ও বিরোধী রাজনীতিকদেরই দায়ী করেন।

মাদুরোর ভাষণের পর রাজধানী কারাকাস ও হামলাস্থল ভ্যালেন্সিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যানের টহল দেখা গেছে। চক্কর দিচ্ছে হেলিকপ্টারও।

খাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে গত চারমাস ধরেই বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে বিরোধীরা। একটি হিসাব মতে, এপ্রিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বিরোধীপক্ষের নেতাকর্মী। তেলসমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখানে খাদ্য ও ওষুধের ভয়ঙ্কর সংকট চলছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে ৭০০ শতাংশ।

এই অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও সশস্ত্র বাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষে ‘নিঃশর্ত আনুগত্য’ প্রকাশ করে আসছেন।

এই ‘আনুগত্যের’ পরীক্ষা অবশ্য নিয়েছিলও বিরোধীপক্ষ। সংকটকালে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণ করে দেশকে রক্ষা করা উচিত কিনা— তার পক্ষে-বিপক্ষে গত মাসে অপ্রাতিষ্ঠানিক গণভোটের আয়োজন করে। এই গণভোটকে পাত্তা না দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব মাদুরোর পাশে থাকারই কথা জানায়।

নতুন করে এই সংঘাত ছড়িয়েছে গত ৩০ জুলাই প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিশেষ অধ্যাদেশে অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক পরিষদ গঠন নির্বাচনের পর। বিরোধীরা মনে করছে, গঠিত এই সাংবিধানিক পরিষদ সংবিধান সংশোধন করতে পারবে। যার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পেছানো এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্বকাল দীর্ঘ পর্যন্ত করা যাবে। এছাড়াও এই পরিষদ ভোটাভুটি করে রাষ্ট্রের কর্তা পর্যায়েও হুটহাট রদবদল আনতে পারে। এমন নজির অবশ্য দেখা গেছে গত শনিবারই (৫ আগস্ট)। সেদিনই পরিষদের প্রথম অধিবেশনে ভোটাভুটি করে মাদুরোর একসময়ের মিত্র ও বর্তমান কড়া সমালোচক প্রধান রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি লুইসা অর্তেগাকে অপসারণ করা হয়।

সশস্ত্র বাহিনীর ‘পূর্ণ সমর্থন সত্ত্বেও’ সংকটের বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন সমাজবাদী দলের সমালোচক অংশটি আশঙ্কা করছে, সংকট ঘনীভূত হতে থাকলে সামরিক বাহিনীর সমর্থন ঠিক থাকবে কিনা, এ নিয়ে উদ্বেগের অবকাশ আছে। কারণ খাদ্য সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি যেভাবে দিনে দিনে বাড়ছে, তা থেকে সামরিক বাহিনীর পরিবার-স্বজনদেরও বাঁচার উপায় থাকবে না। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর তৃণমূল অসন্তুষ্ট হতে পারে, যেটা প্রভাবিত করতে পারে শীর্ষ নেতৃত্বকে। আর সেটার হাওয়া যে মাদুরোর মসনদে লাগতে পারে না— এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।