ছোট্ট শিশুটি তার এক নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়ে এ ‘নরক যন্ত্রণা’ ভোগ করছে বলে সোমবার (০৭ আগস্ট) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুটির গর্ভবতী হয়ে পড়া ও এরপর সৃষ্ট জটিলতার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির পছন্দের বিষয় গণিত ও ইংরেজি। আঁকতে তার ভীষণ পছন্দ। পছন্দের কার্টুন ছোটি আনন্দি (ছোট আনন্দ) ও শিন চ্যান। চিকেন এবং মাছের পাশাপাশি আইসক্রিমও রয়েছে তার প্রিয় খাবারের তালিকায়।
কিন্তু কে জানতো এই হাস্যোজ্জল নিষ্পাপ শিশুটির ভাগ্যে এই নারকীয় ঘটনা ঘটতে চলেছে! খুব কাছের আত্মীয়ের এই পাশবিকতার কথা প্রথমে শিশুটির মা-বাবাও বুঝতে পারেননি।
মাত্র তিন সপ্তাহ আগে তার গর্ভধারণের বিষয়টি নজরে আসে। ওই সময় তার তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। আর তখনই তার মা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
শিশুটির এক প্রতিবেশী বলেন, ‘সে (নির্যাতনের শিকার শিশু) একেবারেই নিষ্পাপ। কী ঘটেছে সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা-ই নেই। ’
স্বাস্থ্যবান হওয়ায় তার মাও শরীরিক পরিবর্তন খেয়াল করেননি। তারা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি মাত্র ১০ বছর বয়সে তাদের সন্তান গর্ভবতী হয়ে পড়বে!
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শিশুটিকে এখনও তার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়নি। তাকে বলা হয়েছে, তার পেটে বড় একটি পাথর আছে। যে কারণে সে মোটা হয়ে যাচ্ছে।
তাকে বিশেষ ডায়েটে রাখা হয়েছে। ডিম, দুধ, ফলমূল, মাছ ও চিকেন খেতে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার বিষয়টি সে উপভোগ করছে।
কিন্তু সম্প্রতি তার বাড়িতে পুলিশ, সমাজকর্মী ও পরামর্শকদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এছাড়া তার বাড়ির সামনে শুরু হয়েছে ‘মিডিয়া সার্কাস’।
শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান নিল রবার্ট বলেন, শিশুটির বাবা আমার কাছে এলেই বলেন-তার সমস্যা গণমাধ্যম। রিপোর্টার সারাক্ষণই তার বাড়ির সামনে বসে থাকে এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও থাকছে না।
শিশুটির মানসিক অবস্থা প্রসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আসল সমস্যা ও পরিস্থিতি শিশুটি এখনও বুঝতে পারছে না। কিন্তু আমি মনে করি, সে এখন কিছুটা আঁচ করতে পাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় লড়াই করে যাচ্ছেন শিশুটির বাবা-মাও। ’
জানা যায়, শিশুটির পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়। দরিদ্র পরিবারটি চন্ডিগড় শহরের একটি এলাকায় এক রুমের ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে বাস করে। শিশুটির বাবা সরকারি কর্মচারী হলেও মা অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা কাজ করেন।
চন্ডিগড় স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির মহাবীর সিং বলেন, ‘আমরা ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরীদের গর্ভধারণের অনেক ঘটনা দেখেছি। কিন্তু ১০ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে এটাই প্রথম ঘটেছে। ’
এদিকে গত ২৮ জুলাই ৩২ সপ্তাহের গর্ভবতী এই শিশুর গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে একটি পিটিশন খারিজ করে দিয়েছন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
চিকিৎসকদের একটি প্যানেল আদালতকে পরামর্শ দিয়ে বলছে, সন্তান জন্মদানের কাছাকাছি রয়েছে শিশুটি। এ সময়ে গর্ভপাত করা হলে শিশুর জীবন প্রচণ্ড হুমকির মুখে পড়বে।
ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ২০ সপ্তাহের বেশি গর্ভবতী হলে গর্ভপাত করা যাবে না। তবে আদালতের ওই নির্দেশ হতাশ করেছে শিশুটির পরিবারকে। কেননা শিশুটিকে নিয়ে বেশ কঠিন সময় পার করছেন তারা।
শিশুর ঘটনাটি তদন্ত করছেন চন্ডিগড় পুলিশের সদস্য প্রতীভ কুমারী। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবার একেবারেই অতি-সাধারণ। তারা এখনও কল্পনা করতে পারেন না, তাদের ওই স্বজন এই পাশবিক ঘটনা ঘটাতে পারে।
পুলিশ কর্মকর্তা প্রভীত বলেন, ‘শিশুটি তার বাবা-মাকে বলছে, সে তাদের কাছে বোঝা হয়ে উঠছে। তার মাও কান্না ছাড়া আমার সঙ্গে কখনও কথা বলতে পারেননি। আর শিশুটির বাবা বলছেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ’
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শিশুটির সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। চিকিৎসকরা সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি হলে তার আগেই সিজার করা হতে পারে।
তবে মেয়েটির পরিবার এ বিষয়ে কিছু করতে রাজি না হওয়ায় অনাগত শিশুটির দেখাশোনার দায়িত্ব শিশু কল্যাণ সমিতিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, ১০ বছরের একটি শিশু কী সন্তান জন্ম দিতে পারে? এটা তার জন্য প্রাণঘাতী হয় কিনা এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
‘তবে আমরা চাই সে রকম কিছুই যেন শিশুটির ক্ষেত্রে না ঘটে,’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে পুলিশ জানায়, শিশুটিকে নির্যাতনকারী ধর্ষক বর্তমানে কারাগারে বন্দি। তার বিচার চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এমএ/