কানাডার দু’টি ইউনিভার্সিটির দু’জন অধ্যাপক গবেষণা শেষে দিয়েছেন এই সতর্কতা এবং পরামর্শ। ইউনিভার্সিটি দ্য মন্ট্রিয়লের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গ্রেওগোরি ওয়েস্ট এবং ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ভেরোনিক বহবট চালিয়েছেন এই গবেষণা।
গবেষক ওয়েস্ট বলেন, কিছু গবেষণার দাবি ছিল- ভিডিও গেমস নাকি মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই (একমাত্র আমাদের গবেষণা ছাড়া) বলতে পারেনি, কম্পিউটারের সঙ্গে দ্রুতগতিতে মিথষ্ক্রিয়ায় মানুষের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রভাবটা স্পষ্ট করে বললে- হিপোক্যাম্পাল মেমোরি সিস্টেমে পড়বে, যা স্মৃতি গঠন এবং মস্তিষ্কের বিশেষ দিক-নির্দেশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সবাই সুস্থ-স্বাস্থ্যবান এবং ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছিলেন। যাদের কোনো ভিডিও গেমস খেলার অভিজ্ঞতা বা অতীত ছিল না। গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়, এই গেমস তাদের হিপোক্যাম্পাসের (মস্তিষ্কে মনে রাখার অঞ্চল) স্পাইটাল মেমোরি (স্মৃতির রেকর্ড করার অংশ) ও কডেট নিউক্লিয়াসের (মস্তিষ্কের তাৎক্ষণিক প্রতিদান ব্যবস্থা, মানুষ যখন কোনো বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে তখন সেটিও বেশি উদ্দীপিত হয়ে ওঠে) মধ্যে কোন দিকে ঝুঁকছে বেশি।
গবেষণার অংশ হিসেবে তাদের ভিডিও গেমস খেলানোর আগে ও পরে মস্তিষ্ক স্ক্যান বা পরীক্ষা করে দেখা যায়, খেলোয়াড়রা চোখ দিয়ে দেখার ওপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন, যেটা কডেট নিউক্লিয়াসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই কডেট নিউক্লিয়াস মানুষের অভ্যাস গঠনেরও কাজ করে।
গবেষকদ্বয়ের মতে, কল অব ডিউটি, কিলজোন, মেডেল অব অনার ও বর্ডারল্যান্ডস ২ এর মতো ফার্স্ট-পারসন শুটার গেমসগুলো ৯০ ঘণ্টা খেলার পর দেখা যাচ্ছে, যে খেলোয়াড়রা কডেট নিউক্লিয়াসে ঝুঁকে পড়েছেন, তাদের হিপোক্যাম্পাসের গ্রে ম্যাটার কমে যাচ্ছে।
সহযোগী অধ্যাপক ওয়েস্ট ও বহবট তাদের গবেষণার ফলাফল বিষয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, এই গবেষণা দেখাচ্ছে যে— কেউ যত কডেট নিউক্লিয়াস ব্যবহার করছে, তার হিপোক্যাম্পাসের তত কম কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে। এতে হিপোক্যাম্পাসের কোষ কমে যায় এবং আকার ছোট হয়ে আসে। হিপোক্যাম্পাসে গ্রে মেটার কমে গেলে মানুষ তারুণ্যে বিষণ্নতায় ভোগে এবং দুর্ঘটনা-পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দেওয়ার মতো আচরণ করে। আর বয়স বাড়লে দেখা দিতে পারে আলজেইমার বা স্মৃতিভ্রম।
শিশু ও তরুণ-তরুণীদের বিষয়ে সতর্কতা দিয়ে দুই গবেষক তাদের প্রতিবেদনে বলেন, ফার্স্ট-পারসন শুটার গেমস সাধারণত সতেরো-ঊর্ধ্বদের জন্য হলেও এখন অনেক কম বয়সী শিশুও এই গেমস খেলে। উদ্বেগটা এখানেই। শিশুদের মস্তিষ্ক যেহেতু গড়ে ওঠার পর্যায়ে, সেহেতু তারা কডেট নিউক্লিয়াসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, স্মৃতিগঠন ও তা মনে করার ক্ষমতা হারিয়ে তারা ভবিষ্যতে আলজেইমারে ভুগতে পারে। দেখা দিতে পারে আরও কোনো মানসিক রোগ।
সুতরাং অ্যাকশন ভিডিও গেমস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আর সময় না নেওয়াই ভালো বলে মনে করেন দুই বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এইচএ/