বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে প্রথমে বার্সেলোনায় একটি ছোট গাড়ি (ভ্যান) নিয়ে জনতার ওপর ওই হামলা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ক্যামব্রিলসে দ্বিতীয় হামলাচেষ্টা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্প্যানিশ ও ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম বার্সেলোনায় হামলার ব্যাপারে জানায়, রাস রাম্বলাস পর্যটকদের ঘোরাঘুরির পছন্দের এলাকা। বিকেলে ওই গাড়ি হঠাৎ সেই ভিড়ের মধ্যে তীব্র গতিতে চালিয়ে দেওয়া হয়। একবার এদিকে বাঁক নিচ্ছিল তো, আরেকবার ওদিকে বাঁক নিচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছিলেন, এটি একেবারেই ইচ্ছেকৃত ঘটনা ছিল। জনতা আতঙ্কে-ভয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হতে থাকে মানুষ। এরপর গাড়ি ছেড়ে চালক পালিয়ে গেলে ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে ধরা হয়।
পরে এই ঘটনাকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলে উল্লেখ করে স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজোই বলেন, সন্ত্রাসীরা স্পেনের জনগণকে ভয় দেখাতে পারবে না। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বার্সেলোনায় ছুটে যান এবং তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন।
বার্সেলোনা পরিদর্শনের পর স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জোসেফ লুই ত্রাপেরো বলেন, এটা পরিষ্কার সন্ত্রাসী হামলা। তারা যত পারা যায়, মানুষ মারতে চেয়েছিল।
এ ঘটনায় আটক করা হয় সন্দেহভাজন দু’জনকে। গাড়ি নিয়ে হামলার পরপরই এ দু’জন পার্শ্ববর্তী একটি পানশালায় পালিয়েছিল। তবে দু’জনের কেউই গাড়ি চালক নয়। মূল হোতাকে ধরতে অভিযান চলছে। যদিও এরইমধ্যে দ্রিস ওবাকির নামে সাগরের ওপারের দেশ মরক্কোর একজন নাগরিকের ছবি প্রকাশ করে পুলিশ বলছে, হামলায় ব্যবহৃত গাড়িটি ২০ বছর বয়সী এই যুবকের নামেই ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু ওবাকির দাবি করছেন, তিনি এই হামলায় জড়িত নন। তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র চুরি হয়ে গিয়েছিল।
বার্সেলোনায় হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তাদের নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাকের তরফ থেকে বলা হয়, আইএসের যোদ্ধারাই এই হামলা চালিয়েছে।
অপরদিকে ক্যামব্রিলসে হামলাচেষ্টার বিষয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, একটি গাড়িটিতে করে ছুটতে থাকা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধাওয়া করলে সেই গাড়িটি উল্টে যায়। তখনই পুলিশ গুলি করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হয়। পরে আহতাবস্থায় আটক করা হয় একজনকে, সেও পরে মারা যায়। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, পাঁচ হামলাচেষ্টাকারীর গায়েই বিস্ফোরক বাঁধা ছিল। সম্ভবত তারা ক্যামব্রিলসের জনসমাগমে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করছিল।
অন্যদিকে, বার্সেলোনার উপকণ্ঠে পুলিশের একটি চেকপোস্টে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেকটি গাড়ি। এসময় পুলিশের গুলিতে গাড়িচালক নিহত হয়েছে। তবে ঘটনাটিকে ‘আলাদা’ বলছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত বছরের জুলাইয়ে ফ্রান্সের নিস শহরে ট্রাক হামলায় ৮৬ জন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনার পর এ ধরনের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে ইউরোপজুড়ে। সেজন্য গাড়ি চালিয়ে জনতাকে পিষ্ট করে দেওয়ার হামলার বিষয়ে সতর্ক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাহিনী।
বৃহস্পতিবারের আগে বুধবারই বার্সেলোনার দক্ষিণের আরেক শহর আলকানারের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে একজন নিহত হয়। সেই ঘটনাটির সঙ্গে বৃহস্পতিবারের দু’টি ঘটনা সম্পৃক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় বলছে, হয়তো ওই বাড়িটিতে সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরক প্রস্তুত করছিল।
প্রায় এক যুগ আগে ২০০৪ সালের মার্চে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের কমিউটার ট্রেনে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে ১৯১ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটল এবার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এইচএ/