ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে দিল্লিতে জনসমাগম 

‌আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করে দিল্লিতে জনসমাগম 

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিশ্বজড়ে দেখা দিয়েছে ভীতি ও অনিশ্চয়তা। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভারতে চলছে লকডাউন। এর মাঝেই সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই দিল্লিতে দেখা গেলো হাজারো মানুষের সমাগম। 

লকডাউনের ফলে কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষ অনিশ্চয়তা নিয়ে দিল্লি ছাড়তে শুরু করেছেন বলে রোববার (২৯ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।  

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদী ভারতজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন।

মানুষও স্বপ্রণোদিতভাবে তা গ্রহণ করেছে। তবে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে লাখ লাখ শ্রমিকের।  

দেশটির বিভিন্ন রাজ্য থেকে কাজের খোঁজে দিল্লিতে আসা এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে যেন মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে ধরা দিয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস। এ অবস্থায় লকডাউনের চারদিনের মাথায় কাজহীন অবস্থায় দিল্লি ছাড়তে শুরু করছেন তারা।  

শনিবার (২৮ মার্চ) রাত উত্তরপ্রদেশের সীমানা এলাকা থেকে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় দিল্লি বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন এসব শ্রমিকেরা। যদিও লকডাউনের ফলে দেশে বাস ও ট্রেন ছাড়াও বন্ধ রয়েছে সমস্ত খাবার হোটেলসহ আনুষাঙ্গিক দোকান-পাট।  

কোনো গণপরিবহন না পেয়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন অনেকে! এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেছে উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির সরকার।  

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানান, তার সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে ২০০ বাসের ব্যবস্থা করেছে।  

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, দিল্লির আনন্দবিহার বাসস্ট্যান্ডে হাজারো নারী-পুরুষের অপেক্ষা বাড়তে থাকে সন্ধ্যা থেকে। চোখে-মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ থাকলেও অপেক্ষারত এসব মানুষের মুখে ছিল মাস্ক, আবারও কারও মুখ রুমালে ঢাকা। তবে কাউকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি।  
  
বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত উত্তরপ্রদেশের এক শ্রমিক সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলেন, আমি একজন দিনমজুর। এখন কোনো কাজ নেই। আমরা করবো কী? সরকারের কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাইনি। উপোষ থেকে মরার উপক্রম হয়েছে।  

‘তাই গ্রামে ফিরে যাচ্ছি। সেখানে রয়েছে আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং মা-বাবা ছাড়াও পরিবারের সদস্যরা। তাই আমরা আমাদের গ্রামে ফিরে যাচ্ছি। যদি এখানে এভাবে পড়ে থাকি তাহলে না খেতে পেয়ে মারা যাবো,’ যোগ করেন জোগেশ নামের ওই শ্রমিক।  

মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সবার কথা একটাই বাড়ি যাওয়া চাই। কেউ-ই শুনতে চাইছে না। তবে করোনা প্রতিরোধে যতটুকু সুরক্ষা দেওয়া যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি।  

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ভাসমান শ্রমিকদের সাহায্য করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, এসব শ্রমিকের বিপর্যয় মোকাবিলায় তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। এ তহবিল থেকেই তাদের পাশে দাঁড়ানো হবে।  

এমনকি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ক্যাম্প তৈরির কথাও জানান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  

এদিকে দিল্লিতে দিনমজুরসহ ভাসমান প্রায় চার লাখ মানুষের মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজের ব্যবস্থা করেছে কেজরিওয়াল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, ভাইরাস ছড়ানো রুখতে এটাই একমাত্র পথ।

দিল্লিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে সহযোগিতার জন্য কেজরিওয়াল সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উড়িশ্যার নুবীন পট্টনায়েকও।

এদিকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যেও শ্রমিকদের জড়ো হওয়ার ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এতে সরকারের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি।  

নিজের পোস্টে রাহুল গান্ধী বলেন, কর্মহারা হয়ে ও নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন এসব মানুষ। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের লক্ষাধিক ভাই-বোন বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। ভারতবাসীর সঙ্গে আমরা এই আচরণ করছি কেন করছি, এটা অত্যান্ত লজ্জাজনক। এর জন্য সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।  

তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী। কোনো নাগরিককে এই পরিস্থিতিতে ফেলা অনেক বড় অপরাধ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।