কয়েক মাস আগে রেস্তোরাঁর চাকরি হারিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী আহমাদ। স্থানীয় বাজার থেকে বাকিতে খাবার কিনছিলেন তিনি।
আহমাদ বলেন, ‘আমাদের আর কেউ চাকরি দেবে না। আমরা আগামীদিনের ভয়ে আছি। জানি না আমাদের সঙ্গে কী হবে। ’
রয়টার্স জানায়, লেবানন, জর্দান ও তুরস্কে বসবাসকারী ৫৬ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী একই পরিস্থিতির সম্মুখীন। আশ্রয় দেওয়া দেশগুলো লকডাউনে থাকায় দিনমজুরি করে কোনো রকমে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা এসব মানুষ সেটুকুও আর পারছেন না।
অর্থনৈতিক সংকটে চাকরি হারিয়েছেন বহু লেবানিজ। বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ফলে লেবাননে আশ্রয় নেওয়া ১৫ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীর প্রতি অসহনশীল হয়ে পড়েছেন তারা।
২০১৪ সালে উত্তর লেবাননে পালিয়ে যাওয়া আহমাদ আরও বলেন, ‘প্রতিবার আমি কাজ খুঁজতে গেলেই আমাকে বলা হয় তারা সিরিয়ানদের চাকরি দেন না। আমি বাড়িতে বসে আছি এবং সবকিছুর দাম চড়া। ’
দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় এক বছর বয়সী বাচ্চার জন্য ডায়াপার কেনার সামর্থ্য আর নেই তার। দুধের জন্য দানশীল এক প্রতিবেশীর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাকে।
লেবাননে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি মিরেইল গিরার্ড বলেন, ‘অধিকাংশ শরণার্থীই বলছেন, ভাইরাস নয়, তারা উদ্বিগ্ন ক্ষুধা নিয়ে। ’
সংস্থাটির গত মাসে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সিরিয়ান শরণার্থীদের ৭০ শতাংশই ক্ষুধার্ত। অনেকেই সাবানও কিনতে পারছেন না।
নয় বছর আগে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু পর, জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ানরা। ত্রাণকর্মীদের আশঙ্কা, এসব শিবিরে একবার করোনা ভাইরাস দেখা দিলে, তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে।
জর্দানের জাতারি শিবিরে বাস করেন ৮০ হাজার সিরিয়ান শরণার্থী। দু’মাসের জন্য লকডাউন জারি করায় শিবির থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে যারা রোজ কাজের জন্য বাইরে যেতেন, তাদের কাজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
জর্দানে প্রায় ৯ লাখ শরণার্থীর বাস। তাদের বেশিরভাগই শিবিরের বাইরে বাস করেন।
আবদুল্লাহ আবা জাইদ ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার কাজ করতেন। দু’মাসব্যাপী লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন বলে এখন কোনো আয় নেই তার।
তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে বাড়িতে রুটি কেনার জন্যও আমার কাছে একটি পয়সা নেই। এদিক-সেদিক থেকে ধার করে চলছি আমি। সবাই ঈশ্বরের দয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ’
এ সপ্তাহে বিধিনিষেধ শিথিল হলেও চাকরি হারানো সিরিয়ানের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ইতোমধ্যে অপর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন আরও অনেক সিরিয়ান।
শরণার্থী পরিবার থেকে ইউএনএইচসিআরে কল দিয়ে সাহায্যের আবেদন করার পরিমাণ বাড়ছে। যারা আগে আত্মনির্ভরশীল ছিলেন, তাদেরও এখন সাহায্য দরকার। ঋণ এত বেড়েছে যে অনেকে জাতিসংঘের ‘ফুড কুপন’ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
দুই বছর আগে সংক্ষিপ্ত মন্দায় পড়েছিল তুরস্কের অর্থনীতি। তারপর থেকেই সিরিয়ান শরণার্থীদের প্রতি অসহনশীল হয়ে ওঠে তুরস্কবাসী। অনেকের দাবি, সিরিয়ানরা স্থানীয়দের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং মজুরি কমে গেছে।
তুরস্কে বসবাসকারী ৩৫ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীর অধিকাংশই দিনমজুর হিসেবে নির্মাণ খাত বা তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করেন। এসব খাতই মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে।
চাকরি হারানো তুর্কি কর্মীরা সরকার থেকে সহায়তা পেলেও সিরিয়ানরা তা পাচ্ছে না। তবে স্থানীয় পৌরসভায় খাদ্য সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারছেন তারা। তাদের জন্য ভাইরাস থেকে সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থাও নেই। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন সিরিয়ান শরণার্থী পরিষ্কার পানি ব্যবহারের সুযোগ পান না।
লেবাননের বেকা উপত্যকার শিবিরে বসবাসরত শরণার্থী ইউনুস হামদু বলেন, ‘আমরা বন্দি। খাবারের অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নেই। লেবানিজরা ক্ষুধার্ত। সিরিয়ানরা ক্ষুধার্ত। সবাই ক্ষুধার্ত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২০
এফএম