ইসলাম ধর্মে হজ ও ওমরা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের যে পঞ্চস্তম্ভ রয়েছে, যার কোনো একটি অস্বীকার করলে একজন মানুষ মুসলমান থাকে না, তার একটি হলো হজ।
অপরদিকে ওমরাহ হলো একটি সুন্নত ইবাদত। এ বিষয়ে জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস এসেছে, ওমরাহ করা ওয়াজিব কি-না রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেছেন, না; তবে যদি ওমরাহ করো তা হবে উত্তম। (আহমদ, তিরমিজি, ৯৩১)
কোরআন ও হাদিসে হজ ও ওমরা প্রসঙ্গ ইরশাদ হয়েছে, وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ
অর্থ: ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর’। -(সূরা: বাকারাহ; আয়াত ১৯৬)
কোরআনুল কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
অর্থ: ‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ ২টিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৮)
অতএব, কারো ওপর যদি হজ ফরজ হয়, তাহলে তার কর্তব্য দ্রুত হজ আদায় করে নেওয়া। অযথা দেরি করা ঠিক নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيضُ وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি হজের সংকল্প করে সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনও অসুস্থ হয়ে যায়, কখনও প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনও অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়’। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৮৮৩)
অনেকেই হজ ফরজ হওয়ার পরও দেরি করতে থাকেন। মনে শয়তানের এ রকম ওয়াসওয়াসা আসে যে হজের জন্য যে অর্থ ব্যয় করবো তা দিয়ে যদি আরো কিছুদিন ব্যবসা-বাণিজ্য করি, তাতে অনেক লাভ হবে। হজ করলে অনেকগুলো টাকা ব্যয় হয়ে যাবে।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজ মানুষকে দরিদ্র্য বানায় না বরং দারিদ্র দূর করে। হজ যেমন গুনাহ দূর করে, দারিদ্র্যও দূর করে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةَ
অর্থ: ‘ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরার করতে থাক। কারণ এ ২টি দারিদ্র্য ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে, যেমনভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। মাবরুর হজের (সব রকম গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র) সাওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছু নয়। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩১, সুনানে তিরমিজি: ৮১০)
জাবের (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, مَا أَمْعَرَ حَاجٌّ قَطُّ
অর্থ: ‘হজ আদায়কারী ব্যক্তি কখনও নিঃস্ব হয় না’।
শ্রোতারা জাবেরের (রা.) কাছে নিঃস্ব হওয়ার মানে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থাৎ হজ আদায়কারীরা অভাব-অনটনে পড়ে না। (মুসনাদে বাযযার: ১০৮০, তাবরানি ফিল আওসাত: ৫২০৯)
উক্ত ২টি হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, হজ-ওমরাহ করলে সম্পদ কমার বদলে বরং বেড়ে যায়। অভাব আসার বদলে অভাব মোচন হয়। হজ করলে সম্পদ কমে যাবে বা দরিদ্র্য আসবে এটা শয়তানের ধোঁকা বা ওয়াসওয়সা।
হজের জন্য খরচের বদলায় সওয়াব লাভের প্রতিশ্রুতিও এসেছে বিভিন্ন হাদিসে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, الحَجُّ سَبيلُ اللهِ، النَّفَقةُ فيه: الدِّرْهَمُ بسَبْعِمِئةٍ
অর্থ: ‘হজ হলো আল্লাহর রাস্তা। হজে এক দিরহাম খরচের সওয়াব সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়’। (তাবরানি ফিল আওসাত: ৫৬৯০)
ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে হজ ও ওমরা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২৪
জেএইচ