পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু হলো মুসলমান সম্প্রদায়। চীনে বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখ।
চীনের উত্তর-পূর্বে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। লাখো মুসলমানের দেখা মেলে উত্তরের চীনা সমতলভূমিতে। মুসলমানদের সবচেয়ে ঘনবসতি হচ্ছে বেইজিং ও তিয়ানজিনে।
নিংজিয়া ও পাশ্ববর্তী হানসু প্রদেশে এমনকি ছোট গ্রামগুলোতেও অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ দেখা যায়, বালক-বালিকারা মাদরাসাগুলোতে কোরআন শরিফ পড়ে, মুয়াজ্জিনেরা মাইকে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেয়। গানসু প্রদেশে হুই মুসলমানদের শক্ত ঘাঁটি লিনজুয়া ছোট মক্কা নামে পরিচিত। সেখানে প্রতিটি ব্লকেই মসজিদ রয়েছে এবং মেয়েরা বোরকা পড়ে চলাফেরা করে। এমনকি এখানকার সরকারি কর্মকর্তারাও ধর্মপ্রাণ ও কোরআন শরিফ পাঠ করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে টুপি ও পাগড়ি রফতানিকারী দেশ হিসেবে চীনের বেশ সুনাম রয়েছে।
গণচীন আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম দেশ। চীনের হুই, উইগুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক, তাতার, কিরগিজ, ডোংসিয়াং, সালার, এবং বোনান- এই দশটি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চীনের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঈদ উপলক্ষ্যে তারা ছুটি পান।
চীনের সর্বত্রই মুসলমান রয়েছে তবে তাদের অধিকাংশই সিন জিয়াংয়ে বসবাস করেন। হাজার বছর ধরে চীনের মুসলমানরা ছোট বড় বহু মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এক তথ্যে জানা গেছে যে, বর্তমানে চীনের মসজিদের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। এসব মসজিদে ইমামের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে মিনার ও গম্বুজ শোভিত মসজিদগুলোর দিকে তাকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন বলে বিভ্রান্তও হতে পারেন।
চীনের ক্যান্টন নগরীতে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদটি ‘মেমোরিয়াল মসজিদ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। চীনে কয়েকজন সাহাবির কবরও রয়েছে।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চীনে প্রকৃত দ্বীনদার মুসলমানের সংখ্যা অনেক। ধর্মের প্রতি তাদের আন্তরিকতা অনেক বেশি। প্রতি বছর চীন থেকে প্রায় ১০ হাজার মুসলমান হজে যান। তাবলিগের কাজেও চীনারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমন করেন। এমনকি টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় প্রতি বছর শতাধিক চীনা তাবলিগি সাথী অংশ নেন।
চীনের প্রাচীন অনেক মসজিদ পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। তেমনি একটি মসজিদ হচ্ছে চীনের শিয়ান শহরের জামে মসজিদ। এই মসজিদের দেয়ালে আরবি ভাষায় পুরো কোরআন লেখা রয়েছে।
কমিউনিস্ট চিন্তাধারার পতাকাবাহী দেশ চীন এবং সেদেশের এমন অনন্য একটি মসজিদ থাকতে পারে, সে সম্পর্কে হয়ত অনেকের ধারণা নেই।
মসজিদটি ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে টংকার রাজবংশের আমলে নির্মাণ করা হয়েছে, পরে মিং রাজবংশের রাজত্বকালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির দেয়াল ১২ হাজার বর্গ মিটারের, যেখানে পবিত্র কোরআনের সকল আয়াত লেখা রয়েছে।
মসজিদটি চীনা স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। তবে ইসলামি ক্যালিগ্রাফি, অারবি বিভিন্ন অলংকরণ একে আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে চীনা ও আরবি ভাষায় কোরআন লেখা আছে।
একটি মসজিদের সাধারণ যেসব উপাদান দরকার যেমন- মিম্বর, মিহরাব, মূল নামাজের জায়গা, মিনার, দুই দিকে আইওয়ান আর মাঝখানে শান থাকে, এখানেও তার সব আছে। কিন্তু বাইরের রূপটা পুরোপুরি চৈনিক।
শিয়ান শহরের মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়াদী এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। শিয়ান তথা গোটা উত্তর-পশ্চিম চীনের মুসলমানদের জীবনে এ মসজিদের লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এমএ/
** আমেরিকার প্রথম মসজিদ গড়ে ওঠে ৮৭ বছর আগে