ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রহমতের প্রহর শেষ রাতের কিছু আমল

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
রহমতের প্রহর শেষ রাতের কিছু আমল

রহমতের প্রহর বা সময় বলতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশকে বুঝায়। অলি-আউলিয়ারা এ সময়কে ইবাদত-বন্দেগির উত্তম সময় হিসেবে বেছে নিতেন।

এ সময়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবারা নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও মোরাকাবা করতেন।

এ ছাড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায় সারারাতই আল্লাহর দরবারে নামাজ, কান্নাকাটি, নফল ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি শেষ রাতে বিভিন্ন নফল ইবাদত শেষে কিছুক্ষণ ঘুমাতেন। তারপর উঠে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। সাহাবাদের অনেকে নবীজিকে অনুসরণ করে সারারাত ইবাদত করতেন। যদিও নবীজি চাইতেন না তারা এতটা কষ্ট করুক।

রহমতের সময় হলো রাত ৩টা থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত। এ সময় প্রকৃতি থাকে নীরব, পরিবার পরিজনও থাকেন ঘুমিয়ে। জাগতিক কোনো কাজকর্মেরও তাড়া থাকে না। ফলে এ সময়ে আল্লাহর ধ্যান বা মোরাকাবা, নফল নামাজ আদায়, জিকির আজকার, দরুদ পাঠ ও তাসবিহ-তাহলিলের অতি উত্তম সময়। গভীর রাতের এ ইবাদতগুলো এত মন দিয়ে করা যায় যে, এতে সাধকরা সাধনার সোপান অতিক্রমের উ‍ৎকৃষ্ট সুযোগ পান।

রাতের তৃতীয়াংশের ইবাদতের কথা কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নির্দেশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, এ সময় আল্লাহতায়ালা বান্দার ডাকে অধিক সাড়া দেন। তিনি বান্দাকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন, তাকে ডাকতে বলেন, তার ইবাদত করে তার নৈকট্যলাভের আহ্বান করেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের যখন শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, হে বান্দা! আমার কাছে প্রার্থনা করো, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করব। আমার কাছে তোমার কি চাওয়া আছে, চাও, আমি তা দান করব। আমার কাছে তোমার জীবনের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দেব। ’ –সহিহ বোখারি : ৬৯৮৬

এভাবে আল্লাহতায়ালা ফজরের আগ পর্যন্ত তার বান্দাদের ডাকতে থাকেন। আর যে বান্দা তার মাবুদ মাওলাকে ডাকার মতো ডাকতে পারেন, আল্লাহর নিকট কাকুতি মিনতি করতে পারেন- রহমতের আমলের বদৌলতে তার ভাগ্যের দরজা খুলে যায়।

এই রহমতের সময় যা কিছু আমল করা হয় তার সবগুলোই মূলত নফল ইবাদত। ফরজ ইবাদত পালন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। তাই নফল ইবাদতকে অতিরিক্তি কাজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সে জন্য এর ফজিলত বেশি। তাই সুযোগ পেলেই বেশি বেশি নফল ইবাদত করা উত্তম।

অনেকেই ফরজ পড়েই তড়িগড়ি করে নামাজ শেষ করে ফেলেন, নফল পড়ার দিকে গুরুত্ব দেন না। অথচ হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি, এমতাবস্থায় আমি তার কর্ণ হই, যদ্বারা সে শ্রবণ করে; আমি তার চক্ষু হই, যদ্বারা সে দর্শন করে; আমি তার হাত হই, যদ্বারা সে ধারণ করে; আমি তার পদযুগল হই, যদ্বারা সে হেঁটে বেড়ায়। এমন অবস্থায় সে আমার কাছে যা কিছু চায় আমি সঙ্গে সঙ্গে তা দান করি। ’ –সহিহ বোখারি : ৬০৫৮

শেষরাত বা রহমতের সময়ের ইবাদতে একাগ্রতা স্থাপন করা সহজ। হাদিসে আছে, ‘শেষ রাতে বান্দা আল্লাহপাকের খুবই নৈকট্য লাভ করে থাকে। ’

শেষ রাতে নফল ইবাদত, তওবা-ইস্তেগফার, কোরআন তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন আমল করে মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে মোনাজাত করলে আল্লাহতায়ালা দয়া করে আমাদেরকে তার রহমতের ছায়াতলে জায়গা করে দেবেন- বলে আশা করা যায়। তাই আমাদের উচিৎ রহমতের প্রহর শেষ রাতের আমলে প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া। আল্লাহতায়ালা আমাদের শেষ রাতের বিভিন্ন আমলের প্রতি মনোনিবেশ করার তওফিক দান করুন। আমিন।



বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।