ডা. সামার আল হুমুদ (Dr. Samar Alhomoud)। গালফ অঞ্চলের বিখ্যাত নারী কোলোরেকটাল সার্জন (Colorectal Surgeon)।
সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত গালফ ও আরব অঞ্চলের হেলথ সার্জারী বিষয়ক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এ উপলক্ষে আরব নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বেশিরভাগ কোলোরেকটাল ক্যান্সারই নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নির্ণয় ও নির্মূল করা সম্ভব। এবং যত তাড়াতাড়ি এটা নির্ণয় হবে তত সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়ে।
তার উদ্দেশ্য, একটি প্যানেল গঠনের মাধ্যমে আরব দেশগুলোয় সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করা। তাদের বোঝানো যে কেন এটির ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে তিনি রিয়াদস্থ বাদশাহ ফয়সাল স্পেশ্যালাইজড হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টারে কোলোরেকটাল সার্জন এন্ড কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। একই সঙ্গে তিনি একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
ইতিমধ্যেই তিনি বিভিন্ন দেশের মেডিকেল সামিটে অংশগ্রহণ করেছেন। লাভ করেছেন ইউরোপ আমেরিকার কোলোরেকটাল সার্জন সোসাইটির সদস্যপদ।
ডা. সামার আল হুমুদ তার প্রতিভার স্বাক্ষর ছাত্রী অবস্থাতেই রেখেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সেন্ট মার্ক হাসপাতালে স্কলারশীপপ্রাপ্ত প্রথম আরব নারী তিনি। কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা এই কৃতী ছাত্রীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হারাতে চাননি। তাই ফেলোশীপ শেষে তিনি অনারারী ভিজিটিং কনসালটেন্ট সার্জন হিসেবে যোগদান করেন ওই হাসপাতালে। পরবর্তীতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মাননা পুরস্কারে পুরস্কৃত করেন।
সমাজসেবার ব্রত নিয়েই আজকের অবস্থানে আসা ডা: হুমুদ একজন সমাজসেবিকাও। সাধারণ জনগণের জন্য বিশেষ করে বঞ্চিত নারীদের জন্যই তিনি কাজ করে যেতে চান। তাদের সচেতন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন তিনি।
তবে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছার পথটি মোটেও মসৃন ছিলো না বলে জানান তিনি। অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এসেছেন। তিনি বলেন, সার্জারী বিষয়টি মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে কোলোরেকটাল সার্জারী। শুধু আরব নয় সমগ্র বিশ্বেই এটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। নারীর জন্য তো অবশ্যই। তার সহপাঠি অনেকেই প্রশিক্ষণের মাঝপথে হাল ছেড়ে বিষয় পরিবর্তন করে অন্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেছেন। তিনি দেখেছেন, আরবের নারীরা সুচিকিৎসার অভাবে এ রোগে ভুগে কত কষ্ট সহ্য করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়, লোকলজ্জা, বিভ্রান্তি, ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে নারীরা ধুঁকে ধুকেঁ বছরের পর বছর ধরে যন্ত্রণা ভোগ করে।
তিনি বলেন, এখনও এ রোগের বিষয়টিতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এখনও নারীদের এ বিষয়ে উদাসীন করে রাখা হয়। অথচ নারীদের হওয়া ক্যান্সারের মধ্যে কোলোরেকটাল ক্যান্সার ৩য় স্থানে রয়েছে। তাদেরই সর্বাগ্রে সুচিকিৎসা প্রয়োজন। আরবের কোনো নারীকে এ বিষয়ে কাজ করতে না দেখে তিনি এরকম একটি জটিল বিষয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সামার আল হুমুদ মনে করেন, সামাজিক ভালো কিছু কাজের মাধ্যমেই আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানো সম্ভব। নারীদের ব্যাপারে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল বলে সমালোচিত সৌদি আরবের মতো দেশে তার এই অনন্য কীর্তি সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তার এই সাহসী পদযাত্রা সকল সমাজের নারীদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে বলা চলে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এমএ/