হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আরাফা দিবসের শ্রেষ্ঠ দোয়া এবং আমি ও পূর্ববর্তী নবীরা যা বলেছিল তার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
’
আরাফার ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম আমল। আরাফার ময়দান মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এখানেই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যা ইতিহাসে ‘বিদায় হজের ভাষণ’ হিসেবে পরিচিত। এখানেই জিলহজ মাসের নবম দিনে ফজরের পর থেকে আরাফার দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে বেশি বেশি নেক আমল করা। বিশেষ করে আরাফার দিবস তথা জিলহজ মাসের নবম দিনে। কেননা দিনটি আল্লাহর নিকট অন্য দিনগুলোর তুলনায় অধিক প্রিয়। বছরের অন্য দিনের আমলের সওয়াবের চেয়ে এদিনের আমলের সওয়াব দ্বিগুণ। তেমনিভাবে এদিনের আমলের সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীদের (মুজাহিদ) থেকেও উত্তম। সুতরাং দিনটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের করণীয় হলো-
ক. একনিষ্ঠভাবে তওবা করে আল্লাহ দিকে ধাবিত হওয়া।
খ. সৎ কাজের প্রতি মনে আগ্রহ সৃষ্টি করা। যে কাজ করলে আমল কবুল হয় না, সেসব কাজ থেকে দূরে থাকা। অতীতের খারাপ কাজের জন্য জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করা।
আরাফার দিবসের আমল
এক. রোজা পালন করা। এটা এদিনের সর্বোত্তম আমল। সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরাফার দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। ’ তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, যারা হজে যায়নি- তাদের জন্য। হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফার দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন। -মুসলিম
ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফার দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে আরাফার দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। -মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪
দুই. তাকবিরে তাহরিমাসহ জামাতে নামাজ আদায় করা। বেশি বেশি সিজদা করা অর্থাৎ নফল নামাজ পড়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বেশি বেশি সিজদা করা তোমার দায়িত্ব। কেননা, তুমি যদি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তাহলে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন, আর একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। ’ –সহিহ মুসলিম: ৭৮৮
তিন. পুরুষের উচ্চ আওয়াজে একাকি তাকবির পাঠ করা। নারীরা নিম্নস্বরে তাকবির বলবে।
চার. আরাফার দিনে বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা। আরাফার দিনের উত্তম দোয়া হলো, যেগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও পূর্ববর্তী নবীরা পাঠ করেছেন। ওই সব দোয়ার অন্যতম হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির। ’
এ ছাড়া আরাফার দিনের দোয়াল আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়াও করা। আলেমরা ‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বেশি বেশি পাঠ করার কথা বলেন।
পাঁচ. চোখ, কান ও জিহ্বাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিবসে যে তার কান, চোখ, জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ’ -শোয়াবুল ঈমান: ৩৭৬৬
ছয়. কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা। কোরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠ করা।
সাত. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা।
আট. সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে অন্যকে বিরত রাখা।
আল্লাহতায়ালা সবাইকে আরাফার দিবসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে বেশি বেশি নেক আমল সঠিকভাবে সম্পন্ন করার তওফিক দান করুন, আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এসআই