সব জীব-জগতের রিজিকের ব্যবস্থা করেন মহান আল্লাহতায়ালা। তিনি কোনো বান্দাকে রুজি-রোজগার, খানা আহরণ বা কাউকে মুখে ঢেলে দেন না।
শ্রম, কষ্ট, প্রচেষ্টার মাধ্যমে হালাল ও বৈধভাবে রুজির যোগান দিতে হয়- এটাই আল্লাহর বিধান। আমাদের প্রিয়নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, মানুষ মাটির মাধ্যমে ফসল, বিবিধ গাছপালা এবং অসংখ্য ফলমূল, পানির মধ্যে সুস্বাদু মাছ, বিশেষ করে স্থলে-শূন্যে-আকাশে বিবিধ পশু-পাখিসহ অগণিত খাদ্যসামগ্রী আল্লাহপাকের নেয়ামতস্বরূপ আহরণ করে। এছাড়া মানুষের নিজ নিজ বৈধ কর্মক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ বহুবিধ পেশা ও কর্মের মাধ্যমে রুজির যোগান দিয়ে থাকেন।
প্রসঙ্গত বলতে হয়, মানুষ যত দিক দিয়েই রুজি অর্জন করুক না কেন তার ১০ ভাগের ৯ ভাগই প্রাপ্ত হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে। এমনকি ইতিহাসে দেখা যায়, আল্লাহর অলি, দরবেশ, পীর-ফকির এবং মহান বুজুর্গানে দ্বীন বিবিধ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করতেন, আল্লাহর পেয়ারা নবী (সা.) স্বয়ং ব্যবসা-বাণিজ্য করেছিলেন। হজরত খাদিজা (রা.)-এর পক্ষে তিনি বেশ কয়েকবার সিরিয়া গমন করেন ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, মরুপ্রান্তরে তিনি মেষ চড়াতেন। ইসলাম মনে করে, বৈধভাবে হালালপন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা বড় ইবাদত। এটি নিজের জীবন ও পরিবার-পরিজনের জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রে এক বড় মাধ্যম। অন্যদিকে সততা, ঈমানদারি, ন্যায়নীতির ব্যবসা করাও দেশ ও জাতির এক ধরনের বিরাট খেদমত। সৎ ও সাধু পন্থায় উপার্জন করা শুধু নয়, আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- তোমরা পবিত্র রুজি (আয়-রোজগার) সৎভাবে অর্জন করো এবং সৎ ও ঈমানদারি ব্যবসায় নিজেদের রুজি অন্বেষণে আত্মনিয়োগ করো।
একথা স্মরণ রাখতে হবে, সমাজে যারা অসৎ-অসাধু পথে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল অর্থ উপার্জন করে, জোর, জুলুম, মিথ্যা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা করে অপরকে ঠকিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে নিপতিত করে, অঢেল টাকা আয় করার বদনিয়তে হেন ধরনের কুপথ নেই যা তারা অবলম্বন করে না এবং পর্বতসম অর্থ-সম্পদ গড়ে তোলে; তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
আমাদের সমাজে আরও লক্ষ্য করা গেছে, এসব অসৎ-অসাধু ব্যবসায়ী সমাজে সুনাম অর্জনের জন্য দেশের বিশেষ বিশেষ এলাকার মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, রাস্তাঘাট, পুল, স্কুল ও কলেজসহ বিবিধ সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর অর্থ দিয়ে এক ধরনের মাতুব্বর সেজে বসে। তাদের প্রতি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের (সা.) ধিক্কার। লোক দেখানো দান বা সেবা করা অতীব জঘন্য অপরাধ।
সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বাধিক হালাল উপার্জনের ক্ষেত্র হলো- ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসায় যারা সাধারণ মানুষকে অহেতুক বাটপারি থেকে বিরত থেকে সম্পূর্ণ সৎ ও সাধুতার সঙ্গে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে, সমাজের কল্যাণ সাধন করে, তারাই সমাজ, দেশ ও জাতির মহান সেবক। হজরত রাসূলে মকবুল (সা.) বলেছেন, সত্যবাদী-সৎ ব্যবসায়ীরা পরকালে আম্বিয়া, সিদ্দিকীনও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। অর্থাৎ সৎ ব্যবসায়ীরা কেয়ামতের মাঠেও সম্মানিত হবেন।
দেখুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কত বড় মর্যাদা ও মরতবা এসব সৎ ও সাধু ব্যবসায়ীর। আবার অন্যদিকে লক্ষ্য করা গেছে, দেশ ও সমাজে এখনও সৎ, সাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করে নিজের পরিবার, সমাজ ও জাতির খেদমত করে মহৎ সেবাকার্যে নিয়োজিত রয়েছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে, এসব সৎ ও সাধু ব্যবসায়ী মহান সেবকের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত, বরকত ও নেয়ামত বর্ষিত হবে। এরা একটি জাতির সম্মানিত গোষ্ঠী, যাদের দ্বারা দেশ, সমাজ ও জাতি মানবতাবোধের পরিচয় পায় এবং মহা কল্যাণ ও আশীর্বাদস্বরূপ যে কথা আমাদের রাসূলে পাক (সা.) বহু আগেই পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। অতএব আসুন, আমরা সৎ ও হক পথে হালাল উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশ, সমাজ ও জাতির মহান সেবক হই এবং যারা অসৎ-অসাধু পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, মানুষকে ঠকায় তাদের অভিসম্পাত থেকে নিজেদের মুক্ত রাখি। আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সা.)-এর রহমত, বরকত ও নেয়ামত অর্জন করে অশেষ সওয়াব হাসিল করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
এসআই