ঢাকা, বুধবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পছন্দ না হলে বলতে পারেন, ‘ইউ মে লিভ’—বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিচারক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৪
পছন্দ না হলে বলতে পারেন, ‘ইউ মে লিভ’—বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিচারক

ঢাকা: বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোলের কারেণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারক। তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের আচরণে আমি নিজেই লজ্জিত।

আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে কীভাবে আদালত চলবে? আপনারা আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারেন, ‘ইউ মে লিভ’।

বুধবার (০২ অক্টোবর) নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের রিমান্ড শুনানিকালে এ ঘটনা ঘটে। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ইমন হোসেন গাজী নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মাহাবুল ইসলাম। বিকেলে এই রিমান্ড শুনানি হয়।

শুনানিকালে বিচারকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। শুনানির শুরুতে বিচারক আইনজীবীকে রিমান্ডের কারণ, ঘটনার সঙ্গে আসামির সম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।

জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নজরুল ইসলাম মজুমদারের সংশ্লিষ্টতা ও সরকারের অর্থদাতা হিসেবে পরিচয় দেন। তাই মামলার অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানান।

শুনানির এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তাকারী বিএনপিপন্থি আইনজীবী কথা বলতে চান। তখন তাকে থামিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই মামলার বিষয়ে জানতে চান বিচারক।

এ সময় উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিচারক উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের আচরণে আমি নিজেই লজ্জিত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে কীভাবে আদালত চলবে?

বিচারক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি এর আগেও আমার কোর্টে শুনানি করেছেন। আপনি জানেন আমি সবাইকেই প্রশ্ন করি। এর ফলে আদেশ লিখতে সুবিধা হয়। আপনারা আমাকে পছন্দ না করলে বলতে পারেন, ‘ইউ মে লিভ’। যদি ওইরকম শক্তি সামর্থ্য থাকে তাহলে আমাদের অন্য কোথাও পাঠাবেন। আপনারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, এজন্য তো আসিনি। আমরা ঢাকা কোর্টে থাকতে আসিনি।

এরপর ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, এখানে যারা আইনজীবী হিসেবে সহযোগিতা করতে এসেছেন তারা সবাই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতিত। ঢাকা বারের সিনিয়র এজিএসকে দেখিয়ে বলেন, উনি তিনবার আওয়ামী লীগের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। কাজেই সবার চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। এরপর তিনি রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলসহ জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামির সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। আদেশের পর আইনজীবীরা আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন।

এর আগে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৪
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।