ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কাজে আসছে না ৫ কোটি টাকার ফগ লাইট, বন্ধ থাকে ফেরি

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
কাজে আসছে না ৫ কোটি টাকার ফগ লাইট, বন্ধ থাকে ফেরি

রাজবাড়ী: রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌপথে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন আর লাখো যাত্রী পদ্মা নদী পাড়ি দেন।

বর্তমানে রাত ও ভোরে ঘন কুয়াশায় নদী পথ দেখতে না পাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট প্রান্তে বাড়ছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এতে করে পদ্মা পাড়ি দিতে আসা যাত্রীরা পোহাচ্ছেন দুর্ভোগ।

এদিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হলেও কুয়াশায় তা কাজে আসছে না।

বিআইডাব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে প্রতি বছরই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে  ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেরি খান জাহান আলী, শাহ আলী, কেরামত আলী, ভাষা শহীদ বরকত ও কে-টাইপ ফেরি কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরানে  ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হয়। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলক এ লাইটগুলো সংযোজন করা হলেও ওই বছরের শীত মৌসুমে তা সুফল বয়ে আনতে পারেনি। এরপর বছরের পর বছর পার হলেও লাইটগুলো মেরামত বা আধুনিকায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই পথের সাধারণ যাত্রী, যানবাহন চালক ও সহকারীরা।

ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমের গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই পদ্মা নদীর এই পথে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেলে মার্কিং আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। দিনের আলোতে সূর্যের তাপে কুয়াশার ঘনত্ব কমলে ফের ফেরি চলাচল শুরু হয়।

গত মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে গেলে ফেরি চলাচলের নৌপথে মার্কিং বাতি অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এরপর বুধবার (৪ জানুয়ারি) সাড়ে ৬ ঘণ্টা কুয়াশার কারণে বন্ধ ছিল এই রুটে ফেরি চলাচল। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝ নদীতে আটকা পড়ে ৩টি ফেরি। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় কুয়াশা কাটলে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কুয়াশায় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। আর ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে ঢাকামুখী যানবাহনের সিরিয়াল জমে।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার তফাদিয়া ইউনিয়ন থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আব্বাস আলী জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লোকাল বাসে করে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছেছি। কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ করে রেখেছে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অবস্থান করতে হচ্ছে আমার মতো অনেক যাত্রীকে। শুনেছি সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেরিতে ফগ লাইট লাগিয়েছে। কিন্তু লাইটগুলো সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।

কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার মিরপুরগামী এম এম পরিবহনের যাত্রী আজগর মিয়া জানান, ফেরিগুলো কুয়াশায় দিক হারিয়ে পদ্মার চরে আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই কুয়াশায় মাঝ নদীতে আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ ব্যপারে কর্তৃপক্ষের কোনো খেয়াল নেই।
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা সবজি বোঝাই ট্রাকের চালক আখের শেখ জানান, এমনিতেই কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এর ওপর ঘাটে এসে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এছাড়া ঘাটে বসে থাকলে বাড়ে পণ্য পরিবহন খরচ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রো রো (বড় আকারের ফেরি) ফেরির এক চালক বলেন, ফগ লাইট শুধু রাতের বেলায় সামান্য কাজ করে। কিন্তু কুয়াশা ভেদ করে সামনে কিছুই দেখা যায় না। যে কারণে যখন ঘন কুয়াশা পড়ে তখন যানবাহন ও যাত্রী নিরাপত্তায় ফেরি সাময়িক বন্ধ থাকে।

বিআইডাব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেশি। যে কারণে ঘাটে যাত্রী, চালক বিআইডাব্লিউটিসি কর্মকর্তারা সবাই অধিক সচেতন রয়েছেন। গত মাসের (ডিসেম্বর) শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে কুয়াশার তীব্রতা। প্রতিদিনই ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে। তারপর কুয়াশা কেটে গেলেও পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় আটকে পড়া যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত পারাপার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে বর্তমানে ছোট বড় ১৩টি ফেরি চলাচল করছে। সচল সব ফেরিতেই ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট লাগানো ছিল। সেগুলো নষ্ট হয়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই একটা ব্যবস্থা হবে। ঘন কুয়াশা প্রাকৃতিক সমস্যা এতে কারো হাত নেই।

উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২২ সাল) ২৬ ডিসেম্বর ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা, ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পৌনে ৫ ঘণ্টা, ২৯ ডিসেম্বর রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সাড়ে ৮ ঘণ্টা,  ৩০ ডিসেম্বর রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১টা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত সাড়ে ৯ ঘণ্টা,  গত ১ জানুয়ারি রাত আড়াইটা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা, ২ জানুয়ারি ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা, ৩ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৪টা থেকে সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা এভাবে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘন্টা তীব্র কুয়াশায় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল।

বাংরাদেশ সময়: ২০৩২, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।