ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কুমিল্লায় ১০৯ কৃষক পাচ্ছেন রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধান রোপণের সুযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৩
কুমিল্লায় ১০৯ কৃষক পাচ্ছেন রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধান রোপণের সুযোগ

কুমিল্লা: কুমিল্লার তিন উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে এবার রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে আধুনিক পদ্ধতিতে সমলয় চাষাবাদে বোরো ধান রোপণ করা হচ্ছে।

বুধবার (জানুয়ারি) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুকের জমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষের উদ্বোধন করা হয়।

এ সময় গ্রামের শত শত কৃষক ও উৎসুক জনতা রোপণ পদ্ধতি দেখতে ভিড় জামান।

চলতি বোরো মৌসুমে বুড়িচং উপজেলার ১৫০ বিঘা জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে খরচ কমবে এবং সেইসঙ্গে ফলনও বাড়বে। এছাড়া পরিপক্ব ধান পেতে সময়ও কমে আসবে।

রামপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, আমি এবার দুই বিঘা জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করবো। এই জমি রোপণে আমার অন্তত আট হাজার টাকা খরচ হতো। এছাড়া কৃষি শ্রমিক পেতেও খুব কষ্ট হতো। এ মৌসুমে বিনামূল্যে ধান রোপণ করছি। পরবর্তী মৌসুম থেকে আমার মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ হবে। কৃষি শ্রমিক খোঁজার হয়রানিও কমে যাবে।

পাশের এতবারপুর গ্রামের কৃষক ওহিদ মিয়া বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তাতে আমাদের ভুল ভেঙে গেছে। আমরা সবাই এখন উচ্ছ্বসিত।

রামপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক বলেন, আগে ধান রোপণে অনেক পরিশ্রম করতে হতো। আজ ১০ মিনিটেই আমার ১৫ শতাংশ জমির ধান রোপণ হয়ে গেছে।

মোহাম্মদ এগ্রিকালচারাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন জানান, প্রতি একর জমিতে ধান রোপণ করতে আড়াই লিটার ডিজেল খরচ হয়। আর এর জন্য আমরা সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ নেই। যদি কেউ একসঙ্গে বেশি জমিতে রোপণ করেন, তাহলে একর প্রতি তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হয়।

বুড়িচং উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল এ এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা। আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা এ পদ্ধতিতে ধান চাষে আগ্রহী। আমরা এ মৌসুমে সবাইকে সুযোগ দিতে পারছি না। এবার প্রণোদনার আওতায় থাকা ১০৯ জন কৃষক এ সুবিধা পাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, জমির মালিকানা হিসেবে কৃষকরা প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৯০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০ গ্রাম ডিএপি ও ৫০০ গ্রাম হারে এমওপি সার পাবেন। ইতোমধ্যে ৩ হাজার কেজি ডিএপি ও ২ হাজার ৫০০ কেজি এমওপি সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ৪ হাজার ৫০০ কেজি ইউরিয়া সার প্রথম উপরি প্রয়োগের আগেই আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে ৫০ একর জমি রোপণের উদ্দেশ্যে ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়েছে। সব জমি কর্মসূচির অর্থায়নে রোপণ করে দেওয়া হবে। মৌসুম শেষে সব জমি কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তনের ব্যবস্থা করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গত দুই বছর ধরে কুমিল্লার একাধিক উপজেলায় আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ করছি। এবার কুমিল্লার বুড়িচং, লাকসাম ও সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রায় ৪০০ একর জমিতে ট্রান্সপ্লান্ট রাইস মেশিনের মাধ্যমে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ কর্মসূচিটা আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রহণ করি। আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষের কারণে সময় কমে আসবে। জমিতে তিন ফসলের পরিবর্তে চার ফসল চাষ করা যাবে।

এর আগে বুধবার সকালে রামপুর-শোভারামপুর মাঠে ২০২২-২০২৩ রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের সমলয়ে চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীর উদ্বোধন ও কৃষক সমাবেশ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদা আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বানিন রায়।

সেখানে বক্তারা বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে মাত্র ২৫-৩০ দিনের সঠিক বয়সের চারা রোপণ সম্ভব হয়। ফলে ধানের জীবনকাল ১০-১৫ দিন কমে আসে। তাছাড়া, মেশিনের সাহায্যে রোপণে সঠিক গভীরতায় চারা রোপণ সম্ভব হয়। এর ফলে প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা বেশি পড়ে। সর্বোপরি ফলন ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।