ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লাদেনের সাক্ষাৎ পাওয়া ফখরুল হাল ধরেন হুজির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
লাদেনের সাক্ষাৎ পাওয়া ফখরুল হাল ধরেন হুজির গ্রেফতার হুজি সদস্যরা

ঢাকা: আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিতে ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানে যান গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় চাকরি করা মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। সেখান থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনার।

কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। সে সময় ফখরুল আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন।

বিভিন্ন সময় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানে অবস্থান করা ফখরুল ইসলাম ১৯৯৮ সালে ভারত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়লে হাল ধরেন তিনি। হুজিকে পুনরায় সংগঠিত করে যেকোনো সময় বড় ধরনের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফখরুল ইসলমসহ হুজির ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন—মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি জানান, সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

তিনি বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের করাচি যান। সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার। তিনি ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে ফখরুল সেই দাওয়াত গ্রহণ করেন। এরপর জিহাদি ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে মুফতি জাকিরের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান ফখরুল।

তিনি ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭-সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক ডিউটি করতেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ওই সময়ে ফখরুল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে আসেন। সেখান থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, ফখরুল সশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সাংঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তিনি এনক্রিপটেড আ্যপস বিআইপি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করেন। যেকোনো সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার পরিকল্পনা করেন তিনি।

বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রেফতাররা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেফতার সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজেদের সংগঠনে ভেড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করতে তাদের মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।