ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথায় সোনালী আঁশ পাট, পেঁয়াজ ও আমন ধানের জমির প্রচুর উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ মাটিকাটা চললেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় ভূমি আইন অমান্য করে অবাধে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করেই চলছে অসাধু মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, একটি প্রতারক চক্র প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে ফসলি জমি ধ্বংস করে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাটিখেকোরা। মাটি খেকোদের উৎপীড়নে দিশাহারা হয়ে পড়েছে জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা। তবে মাটি খেকোদের পরামর্শে কোনো কোনো জমির মালিক জমিতে ফসল ফলানোর চেয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে বেশি লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন।
সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের খলিশপট্টি গ্রামে মদন হাজীর বাড়ির সামনে মাঠের ভিতর ফসলি জমির উর্বর মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে অবৈধ ট্রলি ও ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ইটভাটায়। প্রায় দেড় বিঘা আবাদি জমি থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে আর ৪-৫টি অবৈধ ট্রলি গাড়িতে করে মাটি নেওয়া হচ্ছে। ওই জমির চারপাশে হালি পেঁয়াজের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে।
ভেকু ও ট্রলির ড্রাইভাররা জানান, জমির মালিক খলিশপট্টি গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে শাখাওয়াত হক। তিনি এ সব মাটি ইটভাটায় ও গৃস্থদের কাছে বিক্রি করছেন। আমরা শুধু মাটি কেটে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটির তোলার কাজে নিয়জিত একজন বলেন, মাটি কাটা শুরুর প্রথম দিন মোটরসাইকেল যোগে ২-৩ জন লোক এসে জমির মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। এই টাকা দিয়ে তারা নাকি ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করবে বলে জানায়। এরপর থেকে গত চার দিন ধরে আমরা নিরাপদে মাটি কাটছি। কেউ আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
এ বিষয় জমির মালিক শাখাওয়াত হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে শাখাওয়াতের ভাই হাসমত হক বলেন, শাওখাওয়াত হক অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে টাকার জোগার করছি।
তিনি আরও বলেন, নিরাপদে মাটির কাটার জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটায় আমাদের কেউ বাধা দেয়নি।
অপরদিকে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের পিসনাইল বোড অফিসের পাশে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করতে দেয়া দেখা নাসির উদ্দীন নামে এক ব্যক্তিকে। একই ইউনিয়নের কাজীর বল্লভদী মাঠে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছেন ইদু শেখ নামে আরেক ব্যক্তি।
ইদু শেখ ও নাসির উদ্দীন বলেন, আমাদের জমির মাটি আমরা বিক্রি করতেই পারি। পুকুর খনন করে মাছ ছাড়বো। ফসলের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তাই পুকুর বানাচ্ছি। আমরা এসব মাটি রেললাইন নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছি অনেকদিন ধরে কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে বিঘার পর বিঘা আবাদি কৃষিজমির মাটি ইটভাটা ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতারা। এ সব মাটি অবৈধ ট্রলিতে করে নেওয়া-আনার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাচাপাঁকা সড়কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সালথার সোনাপুর-মাঝারদিয়া সড়কের অটোচালক ফারুক হোসেন ও ভ্যানচালক রায়হান বলেন, সড়ক যতই মেরামত করুন, তাতে লাভ নেই। অবৈধ ট্রলি দিয়ে মাটি নেওয়া-আনা বন্ধ করা না হলে সড়কের বেহাল অবস্থা ভাল হবে না। তবে মাটিখেকোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, যেখানেই ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করা হবে, সেখানেই অভিযান চালানো হবে। খোঁজ-খবর নিয়ে সব জায়গায় মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালাউদ্দীন আইয়ুবী বলেন, কোনোভাবেই ফসলি জমি থেকে মাটি পুকুর খনন করা যাবে না। আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। আর ভূমি অফিসের কেউ যদি সুবিধা নিয়ে মাটির কাটার সুযোগ করে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এসএম