ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জাকিরের নেতৃত্বে কোরবানির চামড়া ছিনতাই ও চাঁদাবাজি চলতো: তৈমূর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
জাকিরের নেতৃত্বে কোরবানির চামড়া ছিনতাই ও চাঁদাবাজি চলতো: তৈমূর সাব্বির হত্যার বিচার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বক্তব্য রাখছেন নিহতের মেয়ে অ্যাড. খন্দকার ফাতেমা তুজ জোহরা, পাশে সাব্বির হত্যা মামলার বাদী তৈমূর আলম খন্দকার।

নারায়ণগঞ্জ: চাঁদাবাজিই ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের পেশা। জাকিরের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ শহরে ঝুট ও মাদক সন্ত্রাস চলতো।

চাঁদাবাজি চলতো অহরহ। এমনকি জাকিরের নেতৃত্বে কোরবানির চামড়া ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটতো।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির হত্যার বিচার দাবিতে উপলক্ষে আয়োজিত এক শোক র‌্যালি শেষে জাকির খানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।

সকালে শহরের চাষাঢ়া বিকেএমইএর সামনে থেকে মাসদাইর কবরস্থান পর্যন্ত শোক র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাব্বির আলম খন্দকারের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর।
 
তিনি বলেন, কেউ কেউ তাকে (জাকির খান) জনপ্রিয় বলে। কিন্তু কোন ভালো কর্ম  আছে তার কিংবা তার পরিবারের? পতিতালয় পরিচালনা ছাড়া তাদের কোনো ভালো কাজ নেই। টানবাজারের পতিতালয়ের মালিক দৌলত খানের ছেলে জাকির। একটি সন্ত্রাস দমন আইনে তার সাজা হয়েছিল। সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুপারিশে তার সাজা মওকুফ হয়। আরেকটি মামলায় তার সাজা এখনও বহাল রয়েছে।

বিএনপির এ সাবেক নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। কেউ বাড়ি করলেও তাদের চাঁদা দিতে হতো। বিসিকের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে তারা চাঁদা আদায় করতো। পত্রিকায় নতুন করে জাকির খানের চাঁদাবাজি এভিডেন্স আকারে এসেছে। পুলিশ এগুলো বন্ধ করে না কেন? 

জেল থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জাকির এখন তার অনুগামীদের দিয়ে এ চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছেন বলে দাবি করেন অ্যাড. তৈমূর।

কেন ব্যবসায়ী সাব্বির খন্দকার খুন হলেন তার ব্যাখ্যা দেন তৈমূর।

তিনি বলেন, অপারেশন ক্লিনহার্ট শুরু হলে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের একটি মিটিং হয়। সেখানে ৩২টি ব্যবসায়ী সংগঠনসহ প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেই মিটিংয়ে সাব্বির আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জের কোথায় কার নেতৃত্বে সন্ত্রাস হয়, জাকির খান ও তার সহযোগীরা কীভাবে সন্ত্রাস করে তা সে তথ্য তুলে ধরে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় টানানো জাকিরের ব্যানার, ছবি অপসারণের দাবি জানান সাব্বির। প্রশাসন এসব সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই জাকির খান বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিতে থাকে।

তৈমূর খন্দকার বলেন, সাব্বির ঝুট সমিতির চেয়ারম্যান ছিল। যখনই তার কাছে খবর আসতো সন্ত্রাসীরা ঝুট নিতে এসেছে তখনই সে এটার মোকাবিলা করতো। এসব কারণে সাব্বিরকে খুন করা হয়।  

তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছিলাম আসামি ধরা পড়বে। তার সামনেই আমি সাক্ষী দেব। আসামি ধরা পড়েছে। র‍্যাব তাকে অস্ত্রসহ ধরেছে। তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ ৩১টি মামলা আছে।  

সবশেষে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, সাব্বির ফিরে আসবে না৷ কিন্তু সন্ত্রাস এখনও আছে। আমি সবাই অনুরোধ করব সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি মোকাবিলা করতে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।

প্রসঙ্গত, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন সাব্বির।

হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।  

মামলার অন্যতম আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান। তেবে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই।  

সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এমআরপি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।