টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল জেলা সদরের আদালত চত্বর এলাকায় চলেছে ভুয়া কাজির দৌরাত্ম্য। এসব কাজির মাধ্যমে অবাধে চলছে বাল্যবিবাহ।
একটি প্রভাবশালী চক্রের মদদে দাপটের সঙ্গেই প্রকাশ্যে বাল্ বিয়ে পড়াতে সমর্থ হচ্ছেন এসব কাজি।
অন্য এলাকার কাজির ডিআর বই ব্যবহার করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে পড়ানোর ঘটনাও ঘটছে হরহামেশাই। এতে অই এলাকার জন্য নিবন্ধনপ্রাপ্ত কাজিরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেফিট করে প্রাপ্তবয়স্ক বানিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হচ্ছে।
কোর্ট চত্বর এলাকা ব্যবহার করে এভাবেই অবাধে চলছে ভুয়া জন্মসনদ, নকল কাবিননামা আর জাল সিল-স্বাক্ষরে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি।
গুঞ্জন, টাঙ্গাইল কোর্ট চত্বরে গেলে অভিভাবক ছাড়াই বিয়ে পড়ানো যায়। এর সুযোগ নিচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরী ও ঘর পালানো প্রেমিক-প্রেমিকারা।
আর এমন পরিস্থিতিতেও জেলা রেজিস্ট্রার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সখিপুর উপজেলার নলুয়া বাছেদ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে পড়াচ্ছেন মো. শাহীন মিয়া নামের এক কাজি। তার কাছে বৈধ সনদ ও কাগজপত্র নেই। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবেই কোর্ট চত্বরে বিয়ে পড়িয়ে আসছেন মো. শাহীন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের আব্দুল হাই কাজির ডিআর বইসহ মধুপুর, মির্জাপুর ও সখিপুরের ডিআর বই ব্যবহার করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহ পড়াচ্ছেন শাহীন। এসব বাল্যবিয়ে পড়িয়ে টাঙ্গাইল শহরের একটি ক্লিনিকের অংশীদারসহ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।
তার ছত্রছায়ায় একাধিক কাজি কোর্ট চত্বরে দেদারছে চালাচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রি ও তালাক নিবন্ধন। অধিক মুনাফার আশায় আদালত চত্বরে কর্মরত বেশ কিছু আইনজীবী তাদের সেরেস্তা ব্যবহার করতে দিচ্ছেন এই সব ভুয়া কাজিদের। ফলে আইনজীবীদের সেরেস্তা ব্যবহার করেই এসব বাল্যবিবাহ পড়ানো হচ্ছে।
এসব কাজি তাদের প্রয়োজনে নকল কাবিননামা, তালাকনামা ও বয়স প্রমাণের এফিডেফিটের ঘোষণাও দিচ্ছেন। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন আতঙ্কে রয়েছেন তেমনি পরকীয়ার বলি হচ্ছে প্রবাসীদের সংসার।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. শাহিন মিয়া স্বীকার করেন, তার কোনো বৈধ কাজির সনদ কিংবা বিবাহ পড়ানোর অনুমোদন নেই। কিন্তু তিনি সাব-কাজি হিসেবে কাজ করেন।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহ পড়ান বলে স্বীকার করেন তিনি। বলেন, বয়স প্রমাণের কাগজপত্র জমা না দিলে কাবিনের সার্টিফাইড কপি দিই না।
তিনি আরও বলেন, আরও অনেকেই কোর্ট চত্বরে বিয়ে পড়াচ্ছেন। মো. জয়নাল আবেদিন, মো. হামিদুল ইসলাম,আকরাম হোসেন ও কায়সার আহম্মেদসহ আরও অনেকেই এ কাজ করছেন।
টাঙ্গাইল জেলা সদরের ১নং ওয়ার্ড ও কোর্ট চত্বর এলাকার ভারপ্রাপ্ত কাজি আব্দুল সামাদ জানান, এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি জেলা রেজিস্ট্রার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজুর রহমান খান বলেন, এ বিষয়ে লিখিতসহ একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মহাদয়ের পরামর্শক্রমে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসএএইচ