ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ফেলা হয়েছে: অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ফেলা হয়েছে: অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন 

ঢাকা: সরকার শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে বলে সমালোচনা করেছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, সরকার তো চায় না এ দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক।

শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকার যদি এটা ঠিক করতে চায় তাহলে অনতিবলম্বে প্রগতিশীল শিক্ষাবিদদের দিয়ে কমিটি করতে হবে। সরকারি শিক্ষাবিদ নয়। যারা দেশ ও মানুষের জন্য কথা বলে তেমন শিক্ষাবিদ নিয়ে এ কমিটি করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'মৌলবাদীদের চাপের মুখে পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার: শিক্ষা ক্ষেত্রে অশনিসংকেত' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও বাংলাদেশ যুব মৈত্রী।  

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে সরকার কিভাবে আত্মসমর্পণ করেছে তার প্রমাণ ২০১৭ সাল। রাতের আঁধারে সরকার হেফাজতের পরামর্শে ১৭টি রচনা পাঠ্যপুস্তক থেকে ফেলে দিয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করেনি। সবাই সরকারের গুণগান গেয়েছে। তাই চলতি হাওয়ার পন্থি হয়ে নয়, বরং পরিপন্থি আজকের এই আলোচনা।

বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা দর্শন সম্পর্কে কিছুই জানে না উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি সব সময় উপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সেখান থেকে যা বলা হবে তাই করবেন।  

সংকট নিরসনে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, কুদরত এ খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনের পর আর কোনো কমিশনের প্রয়োজন নেই বাংলাদেশে। এই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারলে আজকে অন্য বাংলাদেশ দেখতাম আমরা। পরবর্তীতে জনগণের অর্থ খরচ করে লোক দেখানো নয়টি শিক্ষা কমিশন‌ ছিল অপ্রয়োজনীয়।  

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথের অবমাননা স্বাধীন বাংলাদেশ এই প্রথম। এটি অপসারণ করে অপরিপক্ক ও উস্কানিমূলক কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শামসুর রাহমানের কবিতায় ছিল, অদ্ভুত এক উটের পিঠে চলছে দেশ। আমরা ৫২ বছর বয়সে ও সে উটের পিঠ থেকে নামতে পারিনি। সেই উটের পিকটা আরো মোটা হয়েছে।  

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা যারা সমাজে বাস করি আমাদের‌ও কাজ করতে হবে। আমরা আন্দোলন করে মজিদ খানের শিক্ষানীতিকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আর আজ মনে হচ্ছে আমরা পরাজয় স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।  

এনসিটিবি একটা দুর্বল জায়গা উল্লেখ করে বাদশা বলেন, আমাদের পাঠ্যসূচিতে আমাদের সংবিধানটা পর্যন্ত নেই। আমরা সংবিধান পাঠ করি না। আমি মনে করি, '৭২ এর সংবিধান না পড়লে কোনো শিক্ষার্থীকৈ গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া উচিত না।  

পাঠ্যপুস্তক নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রীর জনসমর্থন অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন উল্লেখ করে বাদশা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন না। এখানে জনগণের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ ছিল।  

গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি।  

সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান।  

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ আলোচনায় অংশ নেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
ইএসএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।