ঢাকা: আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন, ২০১৯ প্রণয়ন করলেও এতদিন বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার।
তবে এবার আইন বাস্তবায়নে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর।
আইন অনুযায়ী, জাহাজে মোট পরিবাহিত পণ্যের ৫০ ভাগ দেশীয় পতাকাবাহী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাহাজে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। জায়গা খালি না থাকলে আইনের বিধান অনুযায়ী বাধ্যতামুলক ওয়েভার সনদ নিতে হয় শিপিং এজেন্টদের।
বৃহস্পতিবার(২ মার্চ) নৌ পরিবহন অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মো. নিজামুল হক বলেন, 'ফ্লাগ প্রোটেকশন আইন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কিছুটা অস্পষ্টতা ছিলো। বৈঠকে সকল পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। যেসব জাহাজের ওয়েভার সনদ পেন্ডিং ছিলো সেগুলো দিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ওয়েভার সনদ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বুধবারের বৈঠকে আটকে থাকা ওয়েভার সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও তিন দিনের মধ্যে সনদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন ভাড়া বিদেশি কোম্পানির জাহাজের তুলনায় দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিযোগিতার স্বার্থে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজে ভাড়া সমন্বয় করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। ওয়েভার সনদ নিয়ে সার্বিক বিষয়গুলোর সমাধান না হলে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।
তবে বৈঠকে উপস্থিত ফিডার অপারেটররা জানিয়েছেন, যেসব জাহাজের ওয়েভার সনদ আটকে আছে তারা শুধুমাত্র সেসব জাহাজের ওয়েভার সনদ প্রদানের নির্দেশনা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা তারা পাননি।
এর আগে বুধবার(১ মার্চ) নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে চলাচলকারী বিদেশি জাহাজের প্রতিনিধি, শিপিং এজেন্ট, নৌ বাণিজ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে বৈঠকে উপস্থিত ফিডার অপারেটররা জানিয়েছেন, যেসব জাহাজের ওয়েভার সনদ আটকে আছে তারা শুধুমাত্র সেসব জাহাজের ওয়েভার সনদ প্রদানের নির্দেশনা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা তারা পাননি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে তিন দিনের মধ্যে ওয়েভার সনদ প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজামুল হক।
ওয়েভার সনদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেন তিনি।
আইন অনুযায়ী তিন কর্মদিবসের মধ্যে মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস ওয়েভার সনদ প্রদানের কথা থাকলেও ১০ দিনেও ওয়েভার সনদ পাচ্ছিল না বিদেশি জাহাজের প্রতিনিধিরা। ফলে বিভিন্ন বন্দরে কন্টেইনার বোঝাইয়ের অপেক্ষায় ছিলো জাহাজগুলো। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয় বিদেশি জাহাজ মালিকরা।
ওয়েভার সনদ পেতে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চলাচলকারী এমভি হানসা হামবুর্গ জাহাজ প্রত্যাহার করে নেয় ফিডার অপারেটর কোম্পানি ইউনিফিডার।
বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটের অন্তত ১২টি জাহাজ সময়মতো বন্দর ছেড়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে; এতে ওয়েভার সার্টিফিকেট পেতে অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য প্রতিটি জাহাজের জন্য ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার জরিমানা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯০টি ফিডার জাহাজ কলম্বো, সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাংয়ে যাচ্ছে। এদের ৮২টি বিদেশি এবং ৮টি স্থানীয় মালিকানাধীন।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর কলম্বো, সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, তানজুম পেলিপাস রুটে পণ্য পরিবহন করে ফিডার ভেসেলগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫, ২ মার্চ, ২০২৩
এনবি/জেএইচ