ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে ৬ হাজার তরুণীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা দিল চক্রটি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
যেভাবে ৬ হাজার তরুণীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা দিল চক্রটি

ঢাকা: ভারত থেকে অবৈধ পথে আনা হতো আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস বি’র টিকা। এরপর একটি ভ্যাকসিনের অ্যাম্পুল থেকে তৈরি হতো জরায়ু ক্যানসারের টিকার ১০টি অ্যাম্পুল।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন চালিয়ে তরুণীদের জরায়ু ক্যানসারের সেই নকল টিকা দেওয়া হয়। প্রতি ডোজ দুই হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে মোট তিন ডোজের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হতো সাত হাজার ৫০০ টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা তৈরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেফতাররা হলেন, সাইফুল ইসলাম শিপন, মো. ফয়সাল আহম্মেদ, মো. আল-আমিন, মো. নুরুজ্জামান সাগর ও মো. আতিকুল ইসলাম।

ডিবি জানায়, আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস বি টিকার প্রতিটি অ্যাম্পুল চোরাইপথে আনা হতো ৩৫০ টাকায়। সেই একটি অ্যাম্পুল থেকে জরায়ু ক্যানসারের টিকার ১০টি অ্যাম্পুল তৈরি করা হতো। এসব অ্যাম্পুল বিক্রি করা হতো ২৫ হাজার টাকায়।

গত দুই বছরে এই চক্রটি শিক্ষার্থীসহ প্রায় ছয় হাজার তরুণীকে নকল টিকা দিয়েছে। তিন ডোজের মধ্যে প্রত্যেকে গড়ে দুই ডোজ নিয়ে থাকলেও এর মাধ্যমে প্রতারকদের পকেটে গেছে অন্তত তিন কোটি টাকা।

যেভাবে কারখানায় নকল টিকা তৈরি

ডিবি জানায়, হেপাটাইটিস বি টিকার আমদানি নিষিদ্ধ। সেই টিকা ফজর আলী নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন সাইফুল ইসলাম শিপন। অবৈধ পথে বাংলাদেশে আনা টিকা সাইফুল রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজের বাড়িতে সংরক্ষণ করতেন। পরে পাঠিয়ে দিতেন কেরানীগঞ্জে তার সহযোগী হিমেলের কারখানায়।  

হিমেলের কারখানায় মেশিনের সাহায্যে টিকার অ্যাম্পুল খুলে এক মিলিলিটার করে নকল অ্যাম্পুলে ভরা হতো, যা বাজারজাত করা হতো জরায়ু ক্যানসারের টিকা সারভ্যারিক্স ‘Cervarix’ হিসেবে। এরপর প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হতো এই নকল টিকা।

ডিবির অভিযানে চক্রটির কাছ থেকে ১২টি বাক্সে ভরা হেপাটাইটিস বি-এর মোট ১২০টি টিকা জব্দ করা হয়। এর বাজারমূল্য এক লাখ নয় হাজার ৫৪৮ টাকা। এগুলো দিয়ে অবৈধভাবে ১ হাজার ২০০টি সারভ্যারিক্স টিকা তৈরি করা যেত, যা বিক্রি হতো ৩০ লাখ টাকায়।

এ ছাড়া এক হাজার ২৫টি সারভ্যারিক্স টিকাও জব্দ করা হয়েছে। এসব টিকার বাজারমূল্য ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।

অভিযানে টিকার অ্যাম্পুল তৈরির মেশিন, অ্যাম্পুলের লেবেলের ৫০ পাতা (প্রতি পাতায় ৪৫টি লেবেল), ১০০টি খালি অ্যাম্পুল, অ্যাম্পুলের ৫০০টি ছিপিসহ অন্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করে নকল টিকা প্রয়োগ

চক্রের সদস্যরা নকল টিকা নিজেরাই বাজারে ছড়িয়ে আসছিল। পাশাপাশি কয়েকটি নামি ফাউন্ডেশনকে ব্যবহার করে গাজীপুর, টঙ্গী ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা চালিয়ে টিকা দিত। কিশোরী ও তরুণীদের তারা টিকার তিনটি ডোজ নিতে উদ্বুদ্ধ করত।

চক্রের আতিকুল ইসলাম, আল-আমিন, ফয়সাল ও সাগরের মাধ্যমে নকল টিকা ইতোমধ্যে গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করে প্রায় ছয় হাজার তরুণীর শরীরে প্রয়োগ (পুশ) করা হয়েছে। তারা প্রতি ডোজ দুই হাজার ৫০০ হিসাবে তিন ডোজের জন্য সাড়ে সাত হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছে।

যেভাবে দুই বছর পর ধরা

সম্প্রতি বনশ্রীতে টিকা নেওয়ার পর এক নারীর শরীর ফুলে যায়। এতে সন্দেহ হলে তিনি প্রতিবেশীদের নিয়ে টিকা দিতে যাওয়া লোকদের আটক করেন। শেষ পর্যন্ত তারা কৌশলে পালিয়ে যান।

ওই ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়েই এ চক্রের খোঁজ পাওয়া যায়। গ্রেফতার সাইফুল টিকাদান কর্মসূচির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে টিকা নিতে অনুরোধ জানাতেন। এ ছাড়া শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এবং মাইকিং করেও টিকার প্রচারণা চালানো হতো।  

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারদের রিমান্ডে আনা হবে। কোন কোন ফাউন্ডেশন কীভাবে তাদের সঙ্গে কাজ করত, এসব বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হবে। নকল টিকার প্রচারণাও অপরাধ। এই চক্রে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।