মাদারীপুর: এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের হাহাকার আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সকাল ৮ টায় দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে ১৪ জন নিহত হন।
দুপুর থেকে আসতে শুরু করেন নিহতদের স্বজনরা। মরদেহ শনাক্তের পর হাহাকার আর আর্তনাদে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণ ভারী হয়ে উঠে। বাবার লাশ নিতে এসে সন্তানের আহাজারি, স্বামীর জন্য স্ত্রীর আর্তনাদ, সন্তানের জন্য বাবা-মা, ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের চিৎকার! কান্নায় ভারী হয়ে উঠে চারপাশের বাতাস। বেদনায় ভারী হয়ে উঠে আশপাশের মানুষ, হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরা।
গোপালগঞ্জের সজীব শেখের মরদেহ শনাক্ত করেন তার ভাই ইমরান। ভাইয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আহাজারি করতে থাকেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার কসবা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের মো. জাহিদ খানের মরদেহ শনাক্ত করেন ছেলে রাতুল খান। বাবা হারানো বেদনায় বারবার মূর্ছা যায় সে।
গোপালগঞ্জ থেকে এসেছিলেন নিহত মোস্তাকের স্ত্রী জোনাকি বেগম। স্বামীর লাশ শনাক্তের পর নির্বাক হয়ে যান তিনি। দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। মায়ের কান্নার সঙ্গে কাঁদছিলো তারাও। আহাজারি করতে করতে বলছিলেন,'আমার সব শ্যাষ হইয়া গেলো। আমার ছোট ছোট দুই পোলারে এতিম কইরা ওনি চইল্লা গেলো। ওগো আমি কি বুঝ দিমু। আল্লাহ আমার মরণ দিলো না ক্যান। আমার স্বামীকে তোমরা ফিরাইয়া দাও।
দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে স্বজনরা আসতে শুরু করেন হাসপাতালে। মরদেহ শনাক্তের পর বুঝে নিচ্ছেন স্বজনের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দিচ্ছেন বাড়ির পথে।
স্থানীয় মো.লাবলু বলেন, হাসপাতালে কান্না আর আহাজারি। শোকে স্তব্ধ চারপাশ। স্বজন হারানোদের কান্না আমাদেরও স্পর্শ করে গেছে। আশপাশের অনেকেই হাসপাতালে ছুটে গেছে দেখতে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোদের কান্নায় আমাদের চোখেও পানি চলে আসে। খুবই হৃদয় বিদারক!'
দুপুরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের পর প্রশাসনের কাছ থেকে মরদেহ বুঝে নেয় স্বজনেরা। বিকেল পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ বুঝে নিয়েছে স্বজনেরা।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের দাফন কাফনের জন্য তাদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা খরচের জন্য ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লক কুমার হাজরাকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকছেন। আগামী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে দুর্ঘটনার মূল কারণ, কাদের গাফিলতিসহ বিস্তারিত অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৩
জেএইচ