ফেনী: প্রতি বছরের মতো এবারও ফেনীতে ইফতারের রকমারি আয়োজনের পসরা সাজিয়েছে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ। ফুটপাত থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্ট সব খানেই চোখে পড়ছে বাড়তি অয়োজন।
তবে জেলার সব হোটেল রেস্তোরাঁর ইফতার আয়োজনকে পাশ কাটিয়ে ভিন্নভাবে নজর কাড়ে শহরের ট্রাংক রোড়ের নবী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজের ইফতার আয়োজন। দুপুরের আগে থেকেই এখানে ক্রেতারা ভিড় জমান। দূর-দূরান্ত থেকেওে এখানে ইফতার কিনতে আসেন রোজাদাররা। কেউ ছুটে আসেন বাহারি মজাদার হালিমের টানে, কেউবা আসেন খিছুড়ির খোঁজে। অন্য আইটেমগুলোরও বেশ কদর এ রেস্তোরাঁর।
প্রথম রোজা শুক্রবার (২৪মার্চ) দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসার আগেই এখানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের সুবাস মনোযোগ আকৃষ্ট করে পথচারীদের। এ রেস্তোরাঁকে ঘিরে ফেনী শহরের ট্রাংক রোড়ে এক অন্যরকম আমেজে তৈরি হয় প্রতি বছর। এ হোটেলের ইফতারের আয়োজন যেন উৎসবে পরিণত হয়। এ উৎসবে মিলনমেলা বসে রোজাদারদের। সাজানো হয় বাহারি ইফতারের পসরা।
শহরের প্রাণ কেন্দ্র খেজুর চত্বরে অদূরে নবী হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজের ইফতার বেচা-বিক্রির হাঁকডাক বেশ দূর থেকেই শোনা যায়। প্রতি বছরের মতো ফেনীর এ অভিজাত হোটেলটি এবারও আয়োজন করেছে ইফতারের বাহারি পদ। নানা স্বাদের এসব ইফতার আয়োজনে ক্রেতাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। ১০ থেকে ১৫ জন বিক্রয়কর্মী হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতাদের সামলাতে।
বাংলানিউজকে ক্রেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ হেটেলের ইফতার তাদের পছন্দের তালিকায়। অনেকে বলছেন, নবীর ইফতার আয়োজন ফেনীর ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই হোটেলটিও ক্রেতাদের চাহিদা মাথায় রেখেই তৈরি করছে লোভনীয়-মনোহরি ইফতার।
ক্রেতারা আরও বলেন, শহরের অন্যান্য হোটেলের চেয়ে নবীর ইফতার বিখ্যাত।
বাহারি বিভিন্ন দামের ইফতার সামগ্রী কিনতে রোজা শুরুর প্রথম দিন থেকেই শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ আসছেন হোটেলটিতে। হোটেলটি সুস্বাদু ও মুখরোচক এবং খাবারের ভিন্নতা দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছে।
বিকেলে দেখা গেছে, হোটেলটিতে ক্রেতা সাধারণের উপচেপড়া ভিড়। কেউ নিচ্ছেন ছোলা, পিঁয়াজু, খেজুর আবার কেউ নিচ্ছেন আস্ত মুরগির রোস্ট, ফ্রাই আবার কেউ নিচ্ছেন কাবাব। ক্রেতাদের অনেকেই নিতে ভুল করছেন না নবীর স্পেশাল হালিমও। রমজানে এ হোটেলের হালিমের রয়েছে বাড়তি কদর।
কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন কামালের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, খাবারে গুণগত মান বজায় রাখার কারণে প্রতি রমজানেই হোটেলে ক্রেতারা ভিড় জমান। পুরো রমজানেই বেচাকেনা থাকে জমজমাট। কেননা, বাজারের সবচেয়ে সেরা জিনিসটি হোটেলের জন্য কিনে নিয়ে আসি। আর তার সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের পর, তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিই।
বিক্রয় কর্মকর্তা মেজবাহ রানা বলেন, এবারের ইফতার আয়োজনের মধ্যে রয়েছে চিকেন হালিম। যা কেজি ৪৪০ টাকা ও বাটি ১১০ টাকা। এছাড়া আয়োজনে থাকা বেগুনি প্রতি পিস পাঁচ টাকা, আলুর চপ প্রতি পিস পাঁচ টাকা, চানাবুট প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, পেঁয়াজু প্রতি পিস পাঁচ টাকা, সবজি চপ প্রতি পিস ১৫ টাকা, ডিম চপ প্রতি পিস ২০ টাকা, চিকেন জালি কাবাব প্রতি পিস ৩০ টাকা, মাটন জালি কাবাব প্রতি পিস ৩০ টাকা, মাটন সমুচা প্রতি পিস ১৫ টাকা, নারকেল সমুচা প্রতি পিস ১৬ টাকা, পাটিসাপটা প্রতি পিস ৩০ টাকা, সবজি রোল ৩০ টাকা, মাটন রোল ৩০ টাকা, চিকেন রোল ৩০ টাকা, মোটা জিলাপি প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, ফিরনি ও লাচ্ছা সেমাই প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, চিকেন ফ্রাই প্রতি পিস ১২০ টাকা, গ্রিল কাবাব ১টা ৫০০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ২৫০ টাকা, চিকেন বিরিয়ানি ১৭০ টাকা, বিফ খিচুড়ি ২০০ টাকা ও বোরহানি লিটার ১৪০ টাকা; প্রতি গ্লাস ৩০ টাকা।
কথা হয় ইফতার কিনতে আসা শামীম কবির নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নবী হোটেলে হরেক রকমের ইফতার তৈরি হয়। এখানের খাবার স্বাস্থ্যসম্মতও। আর সে কারণেই এখানে প্রতিবছর আসি ইফতার কিনতে।
জসিম উদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ হোটেলের নিয়মিত ক্রেতা। এখানের রমজানের বাহারি আয়োজন আমাকেও মুগ্ধ করে। ঐতিহ্যের সঙ্গে এখানে মানের দিকটাও দেখা হয়। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও এখানের ইফতার সে কারণেই বাড়িতে কিনে নিয়ে যাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৩
এসএইচডি/জেএইচ