লালমনিরহাট: ধু ধু বালুচরের তিস্তা নদীর বুকে হঠাৎ পানি বেড়েছে, এ কারণে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। গত বছর এমন দিনেই হঠাৎ ধেয়ে আসা বন্যায় ভেসে গেছে কৃষকদের কষ্টার্জিত সোনালি ফসল।
শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে তিস্তা নদীর সব খেয়াঘাট চালু করেছে মাঝি-মাল্লারা। এর আগে শুক্রবার বিকেলেও হেঁটে তিস্তা নদী পাড়ি দিয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এই তিস্তা নদী। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে এ নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে উজানের প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙনে ও প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষা শেষ হলে পানি শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা নদী। ঢেউহীন তিস্তার বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর।
নদীপাড়ের মানুষরা জানান, বর্ষকাল শেষ হতেই প্রতি বছরের মত এ বছরও তিস্তা নদী পানিশুন্য হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা অংসখ্য চরে ভুট্টা, তামাক, গম, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া, চিনাবাদামসহ নানান জাতের সবজির চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। বছরের এই একটি মাত্র মৌসুমে চাষাবাদকৃত ফসলে চরবাসীর চলে পুরো একটি বছরের খাবার।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) দিনগত রাতে হঠাৎ মরুভূমির তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। পরদিন শনিবার সকালে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে নদীপাড়ে মাঝি মাল্লাদের হাঁকডাক বেড়ে যায়। চালু হয় মৃতসব খেয়াঘাট।
হঠাৎ পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের নিচু জমিতে চাষাবাদকৃত ফসল ডুবে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেতের ফসল অর্ধেক পানির নিচে। এসব ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিস্তাপাড়ের চাষিরা।
গতবছর এমন দিনে হঠাৎ ধেয়ে আসা বন্যায় পুরো চরাঞ্চলে ফসলহানি ঘটেছিল। গত বছর অসময়ের বন্যায় কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারেনি তিস্তাপাড়ের চাষিরা। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি বছর অনেকেই ঋণ করে বেশি পরিমাণে চাষাবাদ করেছেন। রাতে হঠাৎ পানি বাড়ায় গত বছরের বন্যার কথা স্মরণ করে সবার বুক আঁৎকে উঠছে। এবারও বাড়ছে পানি। গতবছরের মত অসময়ের বন্যা আর ফসলহানির শঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের চাষিরা।
গোবর্দ্ধন চরের কৃষক ইমতিয়াজ বলেন, গত বছর তিস্তার চরে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছিল। অসময়ের বন্যায় ডুবে ঋণগ্রস্ত হয়েছি। গতবছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর পেঁয়াজসহ তামাক চাষ করেছি। পেঁয়াজ ক্ষেত না ডুবলেও নিচু জমির তামাক ক্ষেত অর্ধেক ডুবে গেছে। তাই পরিবারের সবাই মিলে কেটে নিচ্ছি তামাক পাতা।
একই এলাকার কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। কুমড়া ধরেছেও প্রচুর। সেই কুমড়ার ক্ষেত অর্ধেক ডুবে গেছে। পানি কমলে কিছু কুমড়া পাব। না কমে গত বছরের মত বন্যা হলে তো না খেয়ে মরতে হবে।
চন্ডিমারীর জেলে তমিজ উদ্দিন বলেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পরে নদীতে পানি নেই হেঁটে চর থেকে বাড়ি এসেছি। শনিবার সকালে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। পানির সঙ্গে মাছও বাড়ছে। পরিমাণে কম হলেও এ বছরের প্রথম মাছ ধরেছি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে পানি প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিমাণটা এখনো জানা নেই। সন্ধ্যার পরে পরিমাণ জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
আরএ