বগুড়া: বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (ভিএম) প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে দুই অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ওই স্কুলে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় বগুড়ার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়া পর্যন্ত সবার কাছে সময় চান তিনি। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সময় পর্যন্ত তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ে ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়ার এক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে তার সহপাঠীদের ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট থেকে এ ঘটনা শুরু হয়েছিল।
শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ভিএম স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে থাকে। গত ২০ মার্চ ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওই শিক্ষার্থী নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেবে না বলে। এই নিয়ে তার সহপাঠীদের সঙ্গে তর্ক হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই রাতে বিচারকের মেয়ে ফেসবুকে তার সহপাঠীদের নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে তার চার সহপাঠীরা পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ওই চার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে ডেকে পাঠান। পরে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন। সেখানে দুই অভিভাবককে পা ধরে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে।
ওই রাতেই জেলা প্রশাসক সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ঘটনাটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়লে গত ২৩ মার্চ ওই বিচারককে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় বিচারক প্রত্যাহার হলেও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবারও ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে। সোমবার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের সামনে সমবেত হন। তারা সেখানে বিক্ষোভ করার উদ্যোগ নিলে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন সেখানে যান। তিনি সমবেত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বিদ্যালয়ের ভেতরে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ফেরৎ পাঠিয়ে দেন।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, যেহেতু জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিনই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরুও করেছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিবেন। এই সময় পর্যন্ত আমি সবাইকে ধর্য্য ধরার আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণি শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, এ কারণে তা খতিয়ে দেখতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা দরকার।
তদন্ত কমিটির প্রধান বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) কমিটি গঠন সংক্রান্ত চিঠি তিনি পেয়েছেন। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী ও বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীন।
গতকাল থেকে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এফআর