ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় শ্রেণিকক্ষে আটকে বাবা ও ছেলেকে অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত ফরিদপুর জেলাসহ জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি গ্রামের আসাদুল মোল্লার ছেলে ফরমান মোল্লা (২১), একই গ্রামের শাহজাহান মোল্লার ছেলে সজীব মোল্লা (২২) এবং একই উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের নবিয়াল শেখের ছেলে জুবায়ের শেখ (২০) ও নূর ইসলাম ভূইয়ার ছেলে হাসিব ভুইয়া (২০)। একইদিন দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন করসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, বাবা-ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আগে ওই মামলার প্রধান আসামি কুতুবউদ্দিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। এছাড়াও এ মামলায় ফয়সাল ও জহরুল নামে আরও দুইজন এরই মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে, আমরা প্রথম থেকেই এ ঘটনাটি গুরুত্ত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।
পুলিশ সুপার বলেন, যে মেয়েটির কথা এখানে বলা হয়েছে সে নির্যাতনের শিকার ইয়ামিন মৃধার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। মেয়েটি হওয়ার পরই তার মা মারা যায়। দুই মাস আগে মেয়েটিকে স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় তার সৎ ভাই রাজন। তবে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে চায় ওই স্কুলেরই একজন নিঃসন্তান শিক্ষক। মেয়েটিকে তিনি দুইবার তার ফরিদপুরের বাড়িতেও নিয়ে যান। শেষবার তিনি কাউকে না জানিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর গত ১৭ মার্চ তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই তার বাবাকে স্কুলে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। এরপর তার ভাইকেও ডেকে নেওয়া হয়। তারপর তাদেরকে নির্মম নির্যাতন করা হয়।
তিনি বলেন, বাবা ও ছেলেকে নির্যাতনের আগে মেয়েটির একটি ভিডিও করা হয় যেখানে সে তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে। আর ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের ভিডিওটিও আমরা প্রথমে পাইনি। এজন্য প্রথমেই যৌন নির্যাতনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারিনি। তবে ঘটনার পরেরদিন তার বাবা ও ছেলেকে ডেকে এনে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কথা বলে আমরা বুঝতে পারি যে, বাবা যৌন নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত নয়। পরে মেয়েটিকে যখন মেডিকেল টেস্ট করার জন্য পাঠিয়েছি তখন সে সত্য কথা বলেছে। সে আদালতে জবানবন্দিতে বলেছে, ‘আমাকে যৌন নির্যাতন করা হয়নি। আমি মেডিকেল টেস্ট করাতে চাই না। ওই নারী (রুমা) আমাকে প্রলোভন দেখিয়েছে। টাকা দিয়ে বলেছে যে তোর ভাই আর বাবার বিরুদ্ধে এসব কথা বলবি। আর ওই নারীকে একথা বলার জন্য ঠিক করেছেন ওই স্কুল শিক্ষিকা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শাহজাহান বলেন, মেয়েটি আমাদের কাছে এসব কথা বলেনি বরং কোর্টে বলেছে। এজন্য তার আগেই রাজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এখন বুঝতে পারছি রাজন মৃধা নির্দোষ। আমরা এ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেবো এবং রাজন সংশোধনাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে যাবে।
গত ১৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে ইয়ামিন মৃধা (৪০) ও তার ছেলে রাজন মৃধাকে (১৫) নির্মম নির্যাতন করা হয়। এরপর নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় উঠে। ওই ভিডিওতে মাঝকান্দির নাজিমউদ্দিনের মেয়ে রুমার নেতৃত্বে পাশবিক নির্যাতনের ভয়াবহতা ফুটে উঠে। সোমবার পর্যন্ত রুমা গ্রেফতার হয়নি। তবে, তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
জেএইচ