নারায়ণগঞ্জ: লাঙ্গলবন্দে মহাতীর্থ স্থানে ২০১৫ সালে পদদলিত হয়ে নিহত ১০ জনের স্মরণে ও আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় লাঙ্গলবন্দের রাজঘাট মন্দির প্রাঙ্গণে লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এ বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রার্থনার আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে যেমন ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ রয়েছে, তেমনি এ লাঙ্গলবন্দে আজ যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার পেছনে নিহত এ ১০ জন মানুষের আত্মত্যাগ রয়েছে। এ ১০ জন মানুষের মৃত্যুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য আমরা লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার বলেন, পদদলিত হয়ে নিহত এ ১০ জনের জন্য আজকে লাঙ্গলবন্দের উন্নয়ন হয়েছে। তাই বছরে একবার শুধু তাদের স্মরণ করার মধ্য দিয়েই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। নিহতদের পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের খোঁজ-খবর রাখতে হবে। তাদের মধ্যে কোনো পরিবার অস্বচ্ছল থাকলে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে তাদের মধ্যে চাকরির প্রয়োজন থাকলে সেদিকগুলোও আমাদের খেয়াল রাখা দায়িত্ব। ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমাদের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নিজে ছুটে এসে নিহতদের সৎকারের সহযোগিতা করেছিলেন। পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর নিতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তখনকার নেতারা কেউ সেই দায়িত্বটুকু পালন করিনি। আমাদের উচিত পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর নিয়ে পাশে দাঁড়ানো।
লাঙ্গলবন্দের চলমান উন্নয়ন কাজের স্থবিরতার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা নেতারা মনে করছি লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে পেছনে বর্তমান প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। উনারা কয়দিন পর পর প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তন করেন। আমাদের নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া। আমাদের সংসদ সদস্য লাঙ্গলবন্দে ধর্মমন্ত্রীকে এনে উনার হাতে একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা তুলে দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী এখানে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সংসদ সদস্য নিজে উপস্থিত থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজাইন প্রস্তাব করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কিন্তু এরপর একাধিকবার ডিজাইন পাল্টানো হয়েছে। সড়ক ও জনপদ থেকে সেসব ঘাটলার কাজ শুরু করা হয়েছিল তার অধিকাংশই অসম্পন্ন রেখে চলে গেছে ঠিকাদাররা। যে কয়টি করেছে সেগুলো পুরোপুরি ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। উনারা এটাকে শুধু একদিনের স্নান স্থান মনে করে ভুল করবেন। এটি একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান আর এশিয়ার বৃহৎ। হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এখানে বছরজুড়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। বছরজুড়েই এখানে ভক্তদের আগমন ঘটে। তাই আমি অনুরোধ করবো লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নের ধর্মীয় বিষয়টি মাথায় রেখে গুরুত্ব সহকারে এখানে প্রকল্পের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করা হোক।
প্রার্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- লাঙ্গলবন্দ স্নান পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, নারায়ণগঞ্জ পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, সোনারগাঁ পুজা পরিষদের সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র ভৌমিক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, বন্দর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গৌতম সাহা, স্নান পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রিপন দাস, প্রচার সম্পাদক পলাশ সূত্রধরসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
এমআরপি/আরবি