ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খরিপ-১ মৌসুমের সবজি নিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
খরিপ-১ মৌসুমের সবজি নিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা

বগুড়া: বগুড়ার ১২টি উপজেলাতেই খরিপ মৌসুমের সবজি চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। শীতকালীন সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি বিদায়ের পথে।

এখন খরিপ মৌসুমের চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি বিক্রি করে এবার চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। গেল কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর সবজি বিক্রি করে তারা বেশ লাভবানও হয়েছেন। তাই রবির স্বপ্নে বুক বেঁধে খরিপের সবজি নিয়ে চাষিরা মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ক্ষেত পরিষ্কার করছেন। আবার অনেকে আগাম চাষ করা সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করতে ব্যস্ত থাকছেন। কেউবা নতুন মৌসুমের সবজি লাগাতে জমি প্রস্তুতিতে মগ্ন। একইভাবে সবজির বীজতলা পরিচর্যা নিয়েও থাকছে তাদের ব্যস্ততা।

শনিবার (২৫ মার্চ) বগুড়ার সবজিখ্যাত কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে খরিপ-১ মৌসুমের সবজি নিয়ে চাষিদের এমন ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, নন্দিগ্রাম, ধুনট, শেরপুর ও গাবতলী উপজেলার চাষিরা রকমারি সবজি চাষে এগিয়ে আছেন। এর মধ্যে শাজাহানপুর, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চাষিরা সবজির পাশাপাশি বীজতলাও করে থাকেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নানা জাতের সবজির চারা দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে দিয়ে থাকেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, এরই মাঝে জেলার অনেক চাষি খরিপ মৌসুমের আগাম জাতের সবজি লাগিয়েছেন। যার মধ্যে বেগুন, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, মূলা, চিচিঙা, পটল, ঝিঙা, বরবটি, ঢেঁড়স অন্যতম। এসব সবজির ক্ষেত পরিচর্যায় দেখা গেলো বেশ কয়েকজন চাষিকে। কিছু কিছু সবজি গাছে ফুল এসেছে। আবার কিছু গাছ মরে যাওয়ায় সেগুলো উঠিয়ে ফেলা হচ্ছে আর ভালো গাছগুলো টালের ওপর সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।

শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগড় ইউনিয়নের কৃষক সোলায়মান মণ্ডল জানান, প্রায় ২ বিঘা জমিতে বেগুনের চারা লাগিয়েছি। মানভেদে হাজার চারা কিনতে খরচ হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন জমিতে গাছের গোড়ায় নিড়ানি দিতে হচ্ছে। খেতের ভেতর জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হচ্ছে। পাশাপাশি গাছের গোড়ার মাটি এলোমেলো করে নতুনভাবে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, রবি মৌসুমের প্রায় পুরো সময়টা আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। বাজারে সবজির দামও ছিল ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষ করে রবিতে চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। খরিপে তিনি নিয়মিতভাবেই কুমড়া ও বেগুন চাষ করেন। স্বল্প সময়ে প্রতি বিঘা জমি থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয় বলেও জানান তিনি।

সদর উপজেলার শেখেরকোলা ইউনিয়নের কৃষক রশিদ মিয়া ও ফারুক হোসেন জানান, অল্প কিছু জমিতে রবি মৌসুমের সবজি আছে। এর মধ্যে সীম, ফুলকপি, বাঁধাকপি অন্যতম। অল্প সময়ের মধ্যে এসব সবজি বিদায় নেয়। অনেক চাষি ইতোমধ্যেই এসব সবজির টাল ভেঙে নতুন মৌসুমের সবজি চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

তারা আরও বলেন, অনেকে খরিপ মৌসুম শুরুর আগেই আগামজাতের সবজি চাষে মাঠে নেমেছেন। নতুন মৌসুমের বেশ কয়েক জাতের সবজিও বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

গাবতলী উপজেলার কৃষক মোমিনুল হক জানান, লাভ ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে সবজি আবাদ করেছেন তিনি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর আগে সবজি চাষ করে ভালো ফল পাননি তিনি। তাই ধান ও আন্যান্য ফসল চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু এখন রবি মৌসুম ও খরিপে পুরো জমিতেই সবজি আবাদ করেন।

তিনি আরও বলেন, রবি ফসল আবাদ করে ১ বিঘা জমি থেকে ২৫-৩৫ হাজার টাকার বেশি লাভ করা যায়। লাভের আশায় তার গ্রামের অনেক কৃষকই এখন খরিপে শাক-সবজি আবাদ করছেন। এখানকার কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় বা পতিত জমিতেও সবজি আবাদ করে থাকেন।
চাষিরা জানান, আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত সময়কে রবি মৌসুম বলে। চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সময়কে খরিপ মৌসুম বলে। রবি মৌসুমের প্রথম দিকে কিছু বৃষ্টিপাত হয় তবে তা কম। খরিপ মৌসুমে বিশেষ করে আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। রবি মৌসুমে তাপমাত্রা ও বায়ুর আদ্রতা কম থাকে। কিন্তু খরিপ মৌসুমে তাপমাত্রা ও বায়ুর আদ্রতা বেশি থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারি পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ভালো দাম পাওয়ায় বগুড়ার কৃষকরা সবজি আবাদের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছেন। খরিপ-১ মৌসুম শুরু হয় মার্চের ১৬ তারিখ থেকে। এ মৌসুমের অন্যতম সবজি বেগুন, মূলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙা, পটল, করলা, ঝিঙা, বরবটি, ঢেঁড়স, সজনে ও লালশাক। জেলার সবজিখ্যাত উপজেলাগুলোতে বেশ আগে থেকেই আগামভাবে সীমিত আকারে এ মৌসুমের অনেক সবজি চাষ করা শুরু করেন চাষিরা। কিছু কিছু করে সবজি বাজারে উঠতেও শুরু করেছে। খরিপ মৌসুমে চাষাবাদ করে চাষিরা ভালো ফসল পান বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বগুড়ায় গেল বছর রবি মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ জেলার চাষিরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ও জমি ফাঁকা হওয়া মাত্রই চাষাবাদ শুরু করেন। রবি মৌসুমে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খরিপ মৌসুমেও চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন সবজি চাষে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।