সিলেট: সিলেটের গোলাপগঞ্জে বাবা-মাকে হত্যার দায়ে আতিক হোসেন খান ওরফে আতিকুর রহমান রাহেল নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আসামিকে আরও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এ রায় ঘোষণা করেন সিলেটের সিনিয়র দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আতিকুর রহমান রাহেল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুনামপুর গ্রামের বাবা আবদুল করিম খান ওরফে ঠাকুর মনার ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্তরা ৩ ভাই, ৩ বোন। বোনদের বিয়ে দেওয়ার পর ভাইয়েরা একই বাড়িতে পৃথকভাবে বসবাস করে আসছিলেন। পৈতৃক সম্পদ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের বাবাকে নিয়ে ৩ ভাইয়ের মধ্যে সম্পদ ভাগবাটোয়ারা করে দেন। কিন্তু মেজ ছেলে দণ্ডিত আতিকুর রহমান রাহেল বাড়ির দক্ষিণে ৩ শতক ভূমি তার নামে লিখে নিতে বাবাকে চাপ সৃষ্টি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৭ মার্চ সকালে আতিকুর রহমান রাহেল তার বাবা আব্দুল করিম খানকে নিয়ে বাড়ির দক্ষিণে ক্ষেতের জমির পাশে লাগানো গাছবাগানে গাছপালা কাটতে নিয়ে যায়। সঙ্গে মা মিনারা বেগম পিছু নেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে আতিকুর রহমান রাহেল তার বাবাকে জমি লিখে নিতে চাপ সৃষ্টি করে। তাতে মা মিনারা বেগম বাধা দিলে আসামির হাতে থাকা কোদাল দিয়ে মাকে কোপ মারতে যায়। তখন তার বাবা আব্দুল করিম খান এগিয়ে আসলে কোদালের (লোহার অংশ) ধারাল অংশ দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। এরপর মা মিনারা বেগম এগিয়ে আসলে তাকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের আরেক ছেলে দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ মার্চ একমাত্র আতিকুর রহমান রাহেলকে অভিযুক্ত করে গোলাপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) এসআর পিন্টু সরকার ২৮ মার্চ দিনগত ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা সৎপুর গ্রাম থেকে আসাসিকে গ্রেফতার করলে সে আদালতে হত্যাকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেয়। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা মিনারা বেগমও পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা দেন। এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসার অগ্রগতি না হওয়ায় মিনারা বেগমকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর দু’দিন পরই আঘাতজনিত কারণে তিনিও মারা যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) এসআর পিন্টু সরকার তদন্ত শেষে একমাত্র আসামি আতিকুর রহমান রাহেলকে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি ওই আদালতে বিচারের জন্য এলে ২০২২ সালের ২০ জুন অভিযোগ গঠনের পর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানিতে ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় স্টেড ডিফেন্স হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪, মার্চ ৩০, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ