কক্সবাজার: কক্সবাজারের চৌফলদণ্ডিতে রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের জমিতে এবং বিহারের পথ দখল করে স্কুল ভবন নির্মাণের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এতে রাখাইন সম্প্রদায়ের একমাত্র ধর্মীয় উপসনালয়ের জমি বেহাত, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছেন রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।
এ ঘটনায় রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, উত্তর রাখাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৬০ শতক জমি থাকলেও স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই জমি ভোগ দখল করছেন দাতার ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য মো. শাহাজাহান। যে কারণে এখনো এ বিদ্যালয়ের পাঠদানসহ সব কার্যক্রম চলছে বিহারের জমির ওপর গড়ে তোলা সেই পুরনো ভবনে।
তারা জানান, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের নামে সরকারিভাবে একটি নতুন ভবন অনুমোদন হলে ওই ভবনটিও বিহারের জমিতে করার পায়তারা করছেন ইউপি সদস্য শাহাজাহানসহ প্রভাবশালী মহল। অথচ এর একটু দূরেই রয়েছে বিদ্যালয়ের ৬০ শতক নিজস্ব জমি। যে জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করছেন বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য শাহাজান।
রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা লাথোমং বাংলানিউজকে বলেন, যেভাবে নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে সেভাবে ভবনটি করা হলে বৌদ্ধ বিহারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং পুরো বিহারটি স্কুল ভবনের আড়ালে পড়ে যাবে। এ অবস্থায় ভবনের নকশা পরিবর্তন করে বিহারের পাশে অথবা নকশা ঠিক রেখে স্কুলের নিজস্ব জমিতে ভবন করার দাবি তাদের।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ড. আছিং রাখাইন জানান, বিহারটি প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন। এলাকার শিক্ষা দীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে ওই বিহারেই মন্দির ভিত্তিক স্কুল চালু করেছিলেন ওই বিহারের বিহারাধ্যক্ষ প্রয়াত উঃঞাত্রা মহাথের। পরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে বিহারের সামনের খালি জায়গায় একটি ঘরে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিহারাধ্যক্ষ উঃঞাত্রা মহাথের নিজেই তার নিজস্ব পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে দীর্ঘ সময় চার জন শিক্ষক বেতন-ভাতাসহ বিদ্যালয় পরিচালনার খরচ বহন করেন বলে জানান ড. আছিং।
‘এভাবে চলতে চলতে ১৯৮৩ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ভবন বরাদ্দ দেয়। এরপর সরকারিকরণের জন্য বিদ্যালয়ের নামে নিজস্ব জমির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তখন এগিয়ে আসেন কর্তমান ইউপি সদস্য শাহাজানের বাবা আব্দুর শুক্কুর। তিনি মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর ৬০ শতক জমি রেজিস্ট্রিমূলে দান করেন। এরপর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর ২০১৩ সালে উত্তর রাখাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে রূপ পায়। ’ যোগ করেন ড. আছিং।
উত্তর রাখাইনপাড়া ‘সদ্ধম্মসিরি’ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত শাসন রক্ষিতা বলেন, আমরা চাই বিহার এবং স্কুল দুটিই থাক। কিন্তু স্কুলের কারণে বিহারের যেন ক্ষতি না হয়।
উত্তর রাখাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংক্যছা বলেন, নতুন ভবন বিহারের সামনে হলে স্থানীয়দের অসুবিধার কথা ম্যানেজিং কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা সরেজমিনে বিষয়টি দেখে গেছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য শাহাজাহান।
তিনি বলেন, শত বছরের পুরনো বিহারটিও থাকবে, স্কুলটিও হবে। আমি চাই দুটি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকুক। স্কুলটিতে রাখাইন সম্প্রদায়ের সন্তানের সংখ্যা বেশি।
আমি কাউকে হুমকি দিয়েছি এর কোনো প্রমাণ নেই। সদর ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি যেভাবে সিদ্বান্ত দেবেন সেভাবেই হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্কুলের জমি নিয়ে একটু জটিলতা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৩
এসবি/এসআইএস