ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় শত্রুতার জেরে ও ইফতারি খাওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফের প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন।
বুধবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়াগট্টি বাজারে মানববন্ধন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাশের দোহার গট্টি এলাকায় এ হামলার ঘটনা।
এলাকাবাসী জানায়, গত ০২ এপ্রিল সন্ধ্যায় সালথা উপজেলার বড় বালিয়া গ্রামে শত্রুতার জেরে ও ইফতারি খাওয়াকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মহিলাসহ কয়েকজন গুরুতর আহত ও কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বুধবার (০৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে বালিয়াগট্টি বাজারে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। পরে মানববন্ধন ও মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফের অতর্কিত হামলা করে ওয়ালিদ ফকির ও সবুর খানের নেতৃত্বে কয়েকশ লোক।
এসময় উপজেলার দোহার গট্টি গ্রামের ফিরোজ মাতুব্বর (৩৮), হাবিব শেখ (২৮), কামাল মাতুব্বর (৩৭), অলি (৪০), জানো বেগম (৪৫), লিটন (৩৫), ইব্রাহিম শিকদার (২৩), লিখন মাতুব্বর (১১), ইসাহাক মাতুব্বর (৪০), রাকিব (১৮), সেলিম মাতুব্বরসহ (৩৬) অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে রামদা'র কোপে আহত অলির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ওয়ালিদ ফকির ও সবুর খানের নেতৃত্বে কয়েকশ লোক এ হামলা চালায়। এসময় হামলার বিচারের দাবিতে করা মানববন্ধনকারীদের বলা হয় তোদের কত বড় সাহস আমাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিস। আজকে তোদের কোন বাপ বাঁচায় দেখবো? তোদের ঠেকাতে পুলিশ আসলে তাদেরও আর ফিরতে দেব না। আমরা আগের হামলার বিচার চাইতে গিয়ে ফের হামলার শিকার হলাম। আমরা এই দুর্বৃত্তদের বিচার চাই। আমরা কি ন্যায় বিচার দাবীবি করতে পারবো না।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়ালিদ ফকির ও সবুর খান বলেন, তারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত নন।
তারা বলেন, এসব মারামারির বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। তবে শুনেছি বালিয়া গ্রামের সেলিম মাতুব্বর ও গট্টি গ্রামের হাকিপ খা'র মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ মারামারিতে কেউ আহত হয়ে থাকতে পারে।
এদিকে প্রতিপক্ষের কয়েকজন উল্টো দাবি করেন, মানববন্ধনকারীরাই আগে এ হামলা চালায়। হামলায় তাদেরও নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এছাড়া বালিয়াগট্টি বাজারের পাশের মিরের গট্টি গ্রামের গফুর মাতুব্বর, মকবুল মাতুব্বর ও নজরুল মাতুব্বরসহ আরও কয়েকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এসময় তাদেরও বেশ কয়জন হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে দাবি তাদের।
সালথা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আপাতত পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ০২ এপ্রিল সন্ধ্যায় সালথা উপজেলার বড় বালিয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে ও ইফতারি খাওয়াকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় রামদা ও ছ্যাঁনদা দিয়ে লাবলু মাতুব্বর (৩৫) ও চাম্পা বেগম (৪০) নামে দুইজনকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে প্রতিপক্ষ। একই সঙ্গে এসময় বেশ কয়টি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বড় বালিয়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩ এপ্রিল সালথা থানায় ৪২ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করে হামলার শিকার পরিবার। এ হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই রাতেই আব্দুল হক খান, কুদ্দুস মাতুব্বরসহ ৭ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ তাদের পরদিন ফরিদপুরের আদালতে পাঠালে এর মধ্যে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরকে জামিন দেন আদালত। পরে তারা ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন পুলিশ তাদের মারধর করেছে। তবে, পুলিশের দাবি এ হামলার সাথে হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বর জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়েছেন। এখন হামলার ঘটনায় হওয়া মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। যেটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন।
এ ব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, হামলার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরসহ ৭ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ফরিদপুরের আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বর আদালত থেকে জামিনে আছেন।
আব্দুল হক খান ও কুদ্দুস মাতুব্বরকে পুলিশ আটকের পর মারধর করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি শেখ সাদিক বলেন, তাদের কোনো মারধর করা হয়নি। আমি কেন তাদের মারতে যাবো? তারা অপরাধ করছে কি-না সেটা আদালত বিচার করবে। অপরাধ করলে আদালত শাস্তি দেবে। আমি মারবো কেন? তারা মামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের এ নাটক সাজাচ্ছে বলে দাবি এ পুলিশ কর্মকর্তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬,
আরএ