ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জমি নিয়ে বিরোধে মায়ের মুখোমুখি ব্যারিস্টার ছেলে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
জমি নিয়ে বিরোধে মায়ের মুখোমুখি ব্যারিস্টার ছেলে

যশোর: যশোরের চৌগাছায় ৩৯ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মা লতিফা হায়দারের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন ব্যারিস্টার ছেলে একেএম মর্তুজা রাসেল। পাল্টাপাল্টি মামলার পর সংবাদ সম্মেলনও করেছেন মা ও ছেলে।

মা লতিফা হায়দারের অভিযোগ, ছেলে মর্তুজা রাসেল তার বাবার ৩৯ বিঘা জমি লিখে নেওয়ার জন্য মা-সহ পরিবারের সব সদস্যের নামে থানায় মামলা করেছেন। বাবা হায়দার আলীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছেন।  

অন্যদিকে ছেলে ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেলের দাবি, তার মা-সহ অন্য ভাইবোনেরা সম্পত্তির জন্য তার বাবার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন। তাই বাবার প্রাণ রক্ষার্থে তিনি তাকে নিয়ে গেছেন।

শনিবার (৮ এপ্রিল) যশোর প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেল যশোরের চৌগাছা উপজেলার মাকাপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে এবং লতিফা হায়দার তার মা।

সংবাদ সম্মেলনে লতিফা হায়দার অভিযোগ করেন, রাসেল তার বাবার জমি লিখে নিতে তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের নামে থানায় মামলা করেছেন। বাড়ি ছাড়া হয়ে সন্তানদের নিয়ে তিনি এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। তার স্বামী হায়দার আলী কোথায় আছেন, কেমন আছেন তাও তিনি জানেন না। হায়দার আলী জমি ট্রাস্টে লিখে দিতে চান না। কিন্তু তাকে জমি লিখে দিতে বাধ্য করছেন রাসেল। এসব কাজে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন তার লন্ডন প্রবাসী সনদ ও সেখানকার ব্যারিস্টারি সনদ।

সংবাদ সম্মেলনে লতিফা হায়দার আরও বলেন, যে সন্তানকে জীবনের সবটুকু দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ব্যারিস্টার বানিয়েছেন। সেই সন্তানই আজ মাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে স্বামীকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আমার নামে দুটি মামলা করেছেন। আমার অপর পাঁচ সন্তানকেও এ মামলার আসামি করেছেন। মামলার কারণে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।  

তিনি অভিযোগ করেন, সুচিকিৎসার নামে আমার স্বামীকে লন্ডনে নেওয়ার কথা বলে রাসেল তাকে কোথায় রেখেছেন, কেমন রেখেছেন, তা তিনি জানেন না।

লতিফা হায়দার বলেন, ২০০৭ সালে রাসেল লন্ডনে যান। তার পেছনে পরিবারের খরচ হয় ২০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে গোপনে দেশে এসে বিয়ে করেন। এসব নিয়ে মনোমালিন্য হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য আরও ৩৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফেরত দেওয়ার শর্তে। কিন্তু ওই টাকা ফেরত না দেওয়ায় গোলোযোগ শুরু হয়। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে জমি লিখে নিতে চান রাসেল। না দেওয়ায় সব জমি ট্রাস্টে দানের ষড়যন্ত্র করেন। আর ওই ট্রাস্টের সভাপতি তিনি নিজে হতে চান। এতে বাধা দেওয়ায় আজ এ করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে গোটা পরিবারকে।

তার বড় মেয়ে স্নেহলতা পারভীন বিউটি বলেন, তার বাবা চৌগাছার মাকাপুর ধনীবাড়ির হায়দার আলী এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। ১০০ বিঘা জমির মধ্যে ৫০/৬০ বিঘা জমি ইতোমধ্যেই মুর্তজা রাসেল হজম করেছেন। বাকি আছে ৩৯ বিঘা জমি দখলে নিতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

এদিকে, মা লতিফা হায়দারের সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেল। তিনি দাবি করেন, লন্ডনে আইন পেশায় তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন। ফলে দেশের এই সামান্য জমি নিয়ে তারা কোনো লোভ নেই। বরং তার মা-সহ অপর পাঁচ ভাইবোন ওই সম্পত্তির জন্য প্রতিনিয়ত তার বাবা হায়দার আলীর ওপরে নির্যাতন চালাচ্ছেন। বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে সেই নির্যাতনের দৃশ্য দেখে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। তার দেশে ফেরার খবরে বাবা হায়দার আলীকে নিয়ে তার মা ও ভাইবোনেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে আদালতের মাধ্যমে বাবাকে উদ্ধার করে নিজের জিম্মায় নিয়েছেন। ওই নির্যাতনের ঘটনায় তার ভাই ও বোন কারাগারে আছেন।

ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেল অভিযোগ করেন, সুস্থ অবস্থায় তার বাবার কাছ থেকে কেউ সম্পত্তি লিখে নিতে পারবে না। এজন্য তার মা ও ভাইবোন মিলে নির্যাতন করে স্লো পয়জন দিয়ে তার বাবাকে অসুস্থ করে ফেলেছেন। এখন তাকে পেলে ওই জমি লিখে নেবেন তারা। এতে বাঁধা হয়ে বাবাকে নিয়ে যাওয়ায় মরিয়া হয়ে তার মা ও ভাইবোন তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হেনস্তা করতে মাঠে নেমেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার একেএম মর্তুজা রাসেলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবীব, তার দুই ফুফু হামিদা বেগম ও শাহিদা বেগম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
ইউজি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।