ঢাকা: নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে খাদ্যপণ্য মজুদ করলে যাবজ্জীবন সাজা ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে আর্থিক লাভের জন্য কেউ খাদ্যপণ্য মজুদ করা প্রমাণ করতে পারলে তিন মাস কারাদণ্ড দণ্ডিত হবেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩’এর অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, এর আগে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আজকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ধান, চাল, গম, আটা, ভূট্টা ইত্যাদির উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সংক্রান্ত যেসব অপরাধ আছে সেগুলো চিহ্নিত করে সেসব অপরাধের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘দ্য ফুড গ্রেইন সাপ্লাই প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাকটিভিটি অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৯’ এবং ‘ফুড স্পেশাল কোর্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৬’- দুটো আইনকে একসঙ্গে করে নতুন আইন করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত পরিমাণের বেশি খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অর্থের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবে। তবে শর্ত থাকে যে, এ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি আর্থিক বা অন্য কোনো লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া মজুদ করেছিলেন, তা হলে সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি জানান, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই ধরনের জাতের উপজাতপণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করে, খাদ্যদ্রব্যের মধ্য থেকে কোনো স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ করেন বা পরিবর্তন করে উৎপাদন করেন বা বিপণন করেন বা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশিয়ে উৎপাদন বা বিপণন করেন বা লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের মাধ্যমে বা লাইসেন্সে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি উৎপাদন করেন, তবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সরবরাহ সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, পুরনো খাদ্যদ্রব্য পলিশিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশ্রণ করে সরকারের খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রাখা খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য বা সরকারি গুদামের পুরনো বা বিতরণ করা সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ সরকারি গুদামে সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদপ্তরের বিতরণ করা সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এমন চিহ্নযুক্ত সিল ছাড়া সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, কেনাবেচা করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভ্রান্তি সৃষ্টি সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোনো কোম্পানি এ আইনে অধীনে কোনো অপরাধ করলে ওই অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টরা রয়েছে, এমন প্রত্যেক প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন এ অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে হয়েছে এবং তিনি ওই অপরাধরোধ করার জন্য তিনি যথাযথ চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন>>>
খাদ্যদ্রব্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে ৫ বছর কারাদণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩/আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এএটি