ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত সেই মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম, পরিদর্শক ফয়েজুল ইসলাম, ইমতিয়াজ আহমেদ ও নাজিম উদ্দিনসহ ২০ সদস্যের একটি দল নুসরাতের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় কবর জিয়ারতে অংশ নেন নুসরাত জাহান রাফির বাবা মাওলানা এ বি এম মুছা, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ছোট ভাই রাশেদুল হাছান রায়হান, স্থানীয় এলাকাবাসী ও পিবিআইর সদস্যরা।
মোনাজাত পরিচালনা করেন নুসরাত জাহান রাফির বাবা মাওলানা এ বি এম মুছা। তিনি মোনাজাতে নুসরাতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন, দোষীদের দ্রুত শাস্তি কামনা করেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেন।
কবর জিয়ারত শেষে পিবিআইয়ের সদস্যরা নুসরাতের বাবা ও ভাইকে শান্তনা দেন। তারা নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার মা শিরিনা আক্তারের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাকেও শান্তনা দেন। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
এর আগে সকালে নুসরাতের বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমরা মহান আল্লাহর দরবারে আমার বোনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা শুনেছি আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিলের শুনানি শুরু হবে। উচ্চ আদালতের কাছেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আদালত যে রায় দেন আমরা সে রায় মেনে নেবো। এ মুহুর্তে আমাদের পরিবারের জন্য একমাত্র হুমকি আসামিদের স্বজনদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। তাদের ফেসবুক আইডি থেকে আমাদের পরিবার ও আমার বোনকে নিয়ে বিষোদগার করে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
নুসরাতের বাবা মুসা মানিক বলেন, দেশের সবার কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। আমাদের দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতে যেমনি আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তার সহপাঠীরা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়। একই বছরের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও দণ্ডিত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এসএইচডি/আরআইএস