ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেকে রোগী বহনকারী ট্রলিতে নেই কোনো আরামদায়ক ব্যবস্থা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
ঢামেকে রোগী বহনকারী ট্রলিতে নেই কোনো আরামদায়ক ব্যবস্থা

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী বহন করার ট্রলি সবসময় একই রকম হয়। লোহার পাইপ ও স্টিলের সিট দিয়ে তৈরি ট্রলিগুলো বছরের পর বছর ধরে রোগী বহন করে যাচ্ছে।

দুর্ঘটনায় কোনো রক্তাক্ত রোগী অথবা মেডিসিনের রোগীর পাশাপাশি যে কোনো রোগীকে বহন করার জন্য নেই কোনো আরামদায়ক ট্রলির ব্যবস্থা।

গরমকালে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্টিলের ট্রলিগুলো গরম হয়ে থাকে। কোনো কোনো রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে থাকতে ট্রলিতে। রোগের যন্ত্রণার সঙ্গে এইসব ট্রলির যন্ত্রণা মরার ওপর খাড়ার খাঁ হিসেবে যোগ হয় রোগীদের জন্য।

অনেক রোগীকে দেখা যায় কাপড় মাথায় দিয়ে ট্রলির ওপরে শুয়ে আছেন। আবার কেউ ট্রলির ওপর বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একদিকে ট্রলির গরম, অন্যদিকে আরাম বলতে কিছুই নেই স্টিলের সেই ট্রলিগুলোয়।

সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ছাউনির নিচে রোগীদের বহনের জন্য ট্রলিগুলোকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রচণ্ড গরমের কারণে তপ্ত হয়ে রয়েছে ট্রলিগুলো। হটাৎ কোনো রোগী আসলে, এই উত্তপ্ত ট্রলি দিয়েই তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে লোহার ট্রলিতে রোগীদের বহন করা ও সেবা দেওয়া হচ্ছে।

৭৫ বছর বয়স্ক শামসুন্নাহার বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত। তাকে বিকেল পৌনে চারটার দিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার মেয়েরা। তাকে ওঠানো হয় চাকাযুক্ত সেই স্টিলের ট্রলির ওপরে। গরমের কারণে ট্রলি হয়ে আছে গরম। নেই কোনো আরামদায়ক ব্যবস্থা।

এ রকম ট্রলি দেখে তার মেয়ে আমেনা খাতুন ট্রলিবয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ট্রলি তো গরম, পাশাপাশি কোনো বালিশও নেই। উত্তরে ট্রলিবয় বলেন, এই ট্রলি যে পেয়েছেন, এটাই ভাগ্যের ব্যাপার!

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক সরকারি কর্মচারী জানান, ২৫ বছরে চাকরির জীবনে চাকাযুক্ত স্টিলের বা লোহার ট্রলি দিয়েই রোগী বহন করতে দেখেছেন তিনি। আরামদায়ক ট্রলি তো দূরের কথা। রোগী চাপের কারণে মাঝে মাঝে এই সব ট্রলিও পাওয়া যায় না।

তবে তিনি বলেন, এটা ঠিক সবসময় তো রক্তাক্ত রোগী আসেন না। বেশিরভাগ রোগী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে এসে থাকেন। তাই তাদের জন্য কিছুটা আরামদায়ক ট্রলি থাকা দরকার। কারণ মাঝেমধ্যে রোগীদের এক ট্রলিতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হয়। জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে যেতে হয়। আবার ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে হাসপাতালে অন্য জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হয়।  

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মজিবর রহমান বলেন, যেকোনো রোগীদের বহনের ক্ষেত্রে আরামদায়ক ট্রলি অবশ্যই দরকার। পাশাপাশি হুইল চেয়ার রাখাও জরুরি দরকার।

এ বিষয়ে হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, আসলে আরামদায়ক ট্রলি বলতে হাসপাতাল থেকে আমরা ফোম দিতে পারি। আমাদের হাসপাতালে ফোম আছে। তাহলে আমি ওয়ার্ড মাস্টারকে বলে দিচ্ছি, ফোমগুলো লাগিয়ে দিতে। প্রচণ্ড গরমে কিংবা অন্য সময়েও এটি আরামদায়ক হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এজেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।