ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঈদে বাসে কেউ বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
‘ঈদে বাসে কেউ বাড়তি ভাড়া নিলে ব্যবস্থা’

ঢাকা: আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কোনো পরিবহন মালিক যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

তিনি বাস মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ঈদকে কেন্দ্র করে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিবেন না।

কেউ এটি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তদারকি সংস্থাগুলোকেও বলবো, কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আপনারা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন।  

সোমবার (১০ এপ্রিল) পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমি চাই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত পরিবহনের ভাড়ার বিষয়ে তদারকি করুক। শুধু পরিবহন নয়, প্রতিটি খাতেই তাদের নিয়মিত তদারকি অভিযান পরিচালনা করা উচিত। আমি চাই, যারা বেশি ভাড়া নেয় তাদের বিরুদ্ধে সব সময় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সব সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলুক।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, সারা বছর প্রতিটি খাতে অভিযান চালানোর জন্য আপনাদের জনবল বাড়ানো দরকার, আপনাদের ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানো দরকার। যাতে শুধু একটি বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে নয়, বেশি ভাড়া নেওয়াদের বিরুদ্ধে যেন নিয়মিত আপনাদের অভিযান চলমান থাকে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া যাতে না নেওয়া হয়, সেজন্য আজ বা আগামীকাল সায়দাবাদ ও মহাখালী টার্মিনালে ব্যানার লাগানো হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। গতকাল আমরা এই বিষয়ে একটি বৈঠক করেছি। সেখানে প্রায় ১৫০টি বাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান এবং মালিক ও শ্রমিক নেতারা ছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা বৈঠকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি, ঈদকে কেন্দ্র করে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়া হয়। পাশাপাশি এটি তদারকির জন্য আমরা একটি মনিটরিং টিম গঠন করছি। ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ যাতে সময়মতো বাড়ি পৌঁছাতে পারে, সেজন্য আমাদের টিমগুলো কাজ করবে।

রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলার বিষয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, সাড়ে চার লাখ বাস এবং ট্রাক চলে সারাদেশে। এখন কোনো গাড়ির ফিটনেস কখন শেষ হচ্ছে সেটা মালিক সমিতি কীভাবে জানবে। এটা জানবে বিআরটিএ। তারা ফিটনেসবিহীন গাড়ির নাম্বার হাইওয়ে পুলিশকে দিয়ে দিলে, তারা সেগুলো আটক করবে। সেটা না করে শুধু একজনের ওপর অপবাদ দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর মতো কথা বললে তো হবে না। কীভাবে বিষয়টি সমাধান করা যাবে সেটি দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ঈদের সময় সারা দেশে কোথাও যেন যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় না করা হয়, সেই বিষয়ে মালিক সমিতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করতে চায়। যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। ঢাকার বের হওয়ার মুখগুলোতে আপনারা তদারকি করেন। যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের না হতে পারে। রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশ দিয়ে নজরদারি করেন। শুধু মালিক সমিতিকে দোষারোপ করে লাভ নেই।

সভায় ঈদের সময় বিআরটিসির বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয় এমন অভিযোগ উঠলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ঈদের সময় বিআরটিসির বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় কিনা সেটি এবার তদাররি করা হবে। সরকারি সংস্থার বাস যদি ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, তাহলে বেসরকারি সংস্থার বাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমরা এবার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো।

তিনি বলেন, প্রতিবার ঈদের সময় যাত্রীরা অভিযোগ করেন, পরিবহনগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এছাড়া কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করা হয় না। একই আসন দুই-তিনজন যাত্রীর কাছে বিক্রি করা হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা আজকে এখানে বসেছি।

তিনি বলেন, পরিবহন খাতে যেসব বিশৃঙ্খলা আছে, সেখানে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা তদারকি সংস্থাগুলো এবার সমন্বিতভাবে কাজ করবো। পাশাপাশি এবার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলোর সঙ্গেও আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে চাই। আমরা দুই পক্ষ যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে, অতীতের তুলনায় এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি বলেন, ঈদের আগে যাত্রী থাকে ২০ লাখ। এর বিপরীতে বাস থাকে মাত্র পাঁচ লাখ। তাহলে বাকি ১৫ লাখ মানুষ কীভাবে বাড়ি যাবে? এবিষয়ে সবগুলো টার্মিনালের মালিক সমিতির সঙ্গে তদারকি সংস্থাগুলোর সমন্বয় করা দরকার। এছাড়া টার্মিনালের বাইরে কেউ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিলে বা বাস রিজার্ভ করে গেলে সেটির দায় মালিক-সমিতি নেবে না। আর ঈদের সময় যদি বাস ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়, তাহলে আর অবৈধভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার প্রয়োজন পড়ে না। এতে মালিক ও যাত্রী উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে।

সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফরুক তালুকদার সোহেল বলেন, ঈদের সময় ভাড়া বেশি নেওয়া হয়, এটি আংশিক সত্য। যারা বড় বড় কোম্পানি, তারা ঈদকে কেন্দ্র করে ভাড়া বাড়ায় না। কিন্তু যারা ছোট বা সংগঠিত না, সেসব পরিবহন ভাড়া বাড়ায়। কারণ ঈদের সময় হয় খালি যেতে হয়, না হয় খালি ফিরতে হয়। এতে যে ক্ষতি হয়, সেটা বড় কোম্পানিগুলো পোষাতে পারলেও ছোট কোম্পানিগুলো পারে না। তাই তারা ভাড়া বাড়ায়।

বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক ত্রিনয়ন রায় বলেন, প্রতিটি টার্মিনালে আমাদের নির্ধারিত মূল্য তালিকা দেওয়া আছে। ঈদের আগে পরে ছয়দিন ঢাকার তিনটি টার্মিনালে সার্বক্ষণিক আমাদের টিম থাকবে। কোনো যাত্রী অভিযোগ করলেই, সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা, শাহনাজ সুলতানাসহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিনিধি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধি, সোহাগ পরিবহন, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন>>

>>> ঈদে বাসভাড়া তদারকি করা হবে: ভোক্তা অধিকারের ডিজি

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৩
এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।