বগুড়া: ঈদকে সামনে রেখে বগুড়ার দর্জিপাড়ার কারিগররা নতুন পোশাক বানাতে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদ এলেই কাজের চাপে দর্জিপাড়ার কারিগরদের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
বুধবার (১২ এপ্রিল) বগুড়া শহরের একাধিক দর্জি-প্রতিষ্ঠান ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ব্যস্ততার সম্পর্কে। ঈদ সন্নিকটে আসায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানাগুলোতে সমান তালে হাত-পা চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। দর্জিপাড়ার পাশ দিয়েই গেলেই বোঝা যায়। সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। শব্দই বলে দেয় কারিগররা ঈদের পোশাক বানাতে কতটা ব্যস্ত। এক কথায় বলতে গেলে, মুখরিত এখন বগুড়ায় দর্জিপাড়া।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পছন্দের এসব পোশাক চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতাদের ডেলিভারির স্লিপ ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবেই স্বস্তি তাদের। নাহলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে তাদের ঈদ। তাই এখন থেকেই রাত-দিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বিগত বছরের চেয়ে এবার একটু ব্যতিক্রম।
এবার শহরের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্ডার নেওয়া এখনও বন্ধ করা হয়নি। সাধারণত এ প্রতিষ্ঠানে ১৫ রমজানের পর থেকে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করা হয়। নামি-দামি দুই-একটি প্রতিষ্ঠানে সিঙ্গেল শার্টের অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধই রয়েছে। এবার বড়জোর ২২ থেকে ২৩ রমজান পর্যন্ত অন্যান্য দর্জি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্ডার নেওয়া চালু থাকতে পারে।
জানা যায়, করোনাকালীন বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার একটু ব্যতিক্রম। কেননা ২০২০ সালে করোনার প্রথম বছর সবকিছুই বন্ধ ছিল। এরপর ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি শর্তে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকানপাট ও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সেসময় করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দর্জিপাড়ায় খুব অল্প পরিসরে অর্ডার নিয়ে কাজে হাত দেন শ্রমিকরা। কিন্তু ২০২২ থেকে করোনার প্রভাব কাটিয়ে শহরের দর্জিপাড়ায় ফিরেছে আগের সেই সরগম।
বগুড়ায় পুরুষদের পোশাক তৈরি করা হয়, এমন প্রায় শতাধিক দর্জির দোকান রয়েছে। এছাড়া শহরের বাইরের এলাকায় ও বিভিন্ন বাড়িতে রয়েছে দর্জি দোকান। সেই সংখ্যাটা একেবারে কম না হলেও খুব বেশিও না। তবে সংখ্যাটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।
কারিগররা জানান, করোনার প্রভাবে কয়েক বছর ঈদে তেমন কাজ ছিল না। এ বছর আল্লাহ তাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। কাজের ব্যস্ততা ফিরে পেয়েছেন তারা। তাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে ও ক্রেতার পছন্দের পোশাক তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সেসঙ্গে চেষ্টা করছেন সেরা মানের পোশাক বানাতে। যেন ক্রেতা সাধারণ পরবর্তী সময়েও পোশাক বানাতে তাদের প্রতিষ্ঠানেই আসেন।
শরাফত আলী, মোমিন মিয়া নামে কয়েকজন পোশাক তৈরির কারিগর বাংলানিউজকে জানান, এ বছর ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় তাদের হাত ফাঁকা নেই, চোখেও নেই ঘুম। তাদের দম ফেলার ফুসরতটুকুও যেন আর নেই। সবার হাতে শুধু কাজ আর কাজ। হাত-পা সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবু কাজ শেষ করতে পারছেন না। শুধু কাজ শেষ করলেই হবে না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সুনাম বা গুড উইল রয়েছে। সে অনুযায়ী ক্রেতার পছন্দের পোশাক বানাতে হবে। মান ও সুনাম বজায় রাখতে হবে।
তারা জানান, ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বকীয়তা ও মান বজায় রেখে কারিগররা পোশাক বানিয়ে থাকেন। সবাই চেষ্টা করেন সেরা মানের পোশাক বানাতে। যেন ক্রেতা সাধারণ পরবর্তী সময়েও পোশাক বানাতে তাদের প্রতিষ্ঠানেই আসেন।
শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড টেইলার্সের ব্যবস্থাপক মো. মতিউর রহমান মতি বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কারিগররা মজুরি বাড়ার আন্দোলনে নামেন। গত কয়েক বছর ধরে এ আন্দোলন না থাকলেও আগেই তারা তাদের মজুরি বাড়ার চুক্তি করে নেন। আন্দোলনের ফলে ঈদের মওসুমে তারা সঠিক সময়ে পোশাক ডেলিভারি দিতে পারেন না। এ কারণে ১০ বা ১৫ রমজান থেকেই তারা অর্ডার নেওয়া বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। এদিকে গেল কয়েক বছর করোনার কারণে কাজের চাপ ছিল না। এবার কিছুটা বাড়লেও আশানুরুপ নয়। এখনও অর্ডার নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এখন দিনে শার্ট ও প্যান্ট মিলে বড়জোর দিনে ৭০ পিস করে অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। শার্টের মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও প্যান্টের মজুরি ৫০০ টাকা।
আস্তে আস্তে ক্রেতা সাধারণ রেডিমেড পোশাক কেনার দিকে বেশি ঝোঁক দেখাচ্ছেন। ঈদে ক্রেতারা রেডিমেট পোশাক কেনার দিকে ঝুঁকলেও টেইলার্স পোশাক পাল্লা দিয়ে চলছে বলেও মন্তব্য টেইলার্স মালিকদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
কেইউএ/এএটি