ঢাকা: চৈত্র শেষে এসেছে বৈশাখ। এই সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ।
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
রোববার দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় রিকশাচালক মো. সোলায়মানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরম কেমন পড়ছে, তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তারপরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, গরমে শুধু যে কষ্ট হচ্ছে তা নয়, আয়-রোজগারও কমেছে। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ রিকশা যেমন চালানো যায় না, আরেকদিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরম ও রোজার কারণে বাসা দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।
একই কথা বলেন রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, এই রোদে মোটরসাইকেল চালাতে কষ্ট হয়। তার ওপর দীর্ঘক্ষণ জ্যামে বসে থাকতে হয়। কিন্তু জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই বের হতে হয়। এতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। রোদ আর গরমের কারণে এখন মানুষ মোটরসাইকেলে যেতে চায় না। কষ্ট করে হলেও বাস বা রিকশায় যায়। কারণ বাস ও রিকশায় অন্তত মাথার উপর ছায়া দেওয়ার মতো কিছু আছে, ফ্যান আছে। মোটরসাইকেলে গেলে রোদে পুড়তে হয়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে ফুটপাতের ছাতা বিক্রেতা বলেন, কষ্টের তো শেষ নেই। কিন্তু পেট চালাতে হলে রোদ হোক বা বৃষ্টি, গরম হোক বা শীত, আমাদের বসতেই হবে।
গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তানভীর আহমেদ তুর্য বলেন, গরমে তো আর অফিস বন্ধ নেই। তাই এই রোদ-গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কি করে আমাদের যেতে হয়। এই আমাদের জীবন-যুদ্ধ।
বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুর রহমান বলেন, বাইরে তো গরমের জন্য এক ঘণ্টাও থাকা যায় না। বাসায়ও গরমে নাজেহাল অবস্থা। মাথার উপর ফ্যান ঘোরে, কিন্তু সেই বাতাসও গরম। দিনের বেলা ট্যাপ থেকে যেন ফুটন্ত পানি বের হয়। একটু বৃষ্টি যে কবে নামবে সেই অপেক্ষায় আছি।
এপ্রিলে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এবারের তাপমাত্রা বেড়েছে ক্রমান্বয়ে। রোদের প্রখরতাও অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। ইতোমধ্যে দুটি রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ। আর নয় বছরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তিন কারণে এবারের তাপপ্রবাহের মাত্রা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। সেগুলো হলো- জলীয় বাষ্প অস্বাভাবিক থাকা, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু কম আসা এবং সাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রক্রিয়া তৈরি না হওয়া।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, সাগর থেকে যে বাতাস আসে, তা হলো দক্ষিণ পূর্ব মৌসুমি বায়ু। তা আসার সময় জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। কিন্তু এবার বাতাসটা আসছে না সেভাবে। আর জলীয় বাষ্পও খুব কম। এ ছাড়া পশ্চিমা মৌসুমি বায়ুও শুকনো। এর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বায়ু যেখানে মিশে যায়, সেখানে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। তা এখনো হচ্ছে না। কারণ জলীয় বাষ্প কম। ফলে দেশে শুকনো বায়ু প্রবেশ করছে ও তাপমাত্রা বাড়ছে।
তবে আগামী কয়েকদিনে মধ্যে বৃষ্টিপাতের দেখা মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, আগামী ২৪ এপ্রিলের দিকে সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায় পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ী আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এসসি/আরএইচ