ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পলি অপসারণে অনিয়ম, ১৫ নৌপথ পরিত্যক্ত  

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
পলি অপসারণে অনিয়ম, ১৫ নৌপথ পরিত্যক্ত   ফাইল ছবি

ঢাকা: পলি অপসারণে (ড্রেজিং) অনিয়মের কারণে অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে।

নৌযান মালিকসহ নৌ খাত নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর নেতা ও বিশেষজ্ঞরা এমনটিই মনে করেন।  
 
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলগামী স্বীকৃত নৌপথের সংখ্যা ৪১। তবে ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল থেকে যাত্রীবাহী নৌযান (লঞ্চ) চলাচল করে ২৬টি নৌপথে। যাত্রীস্বল্পতার কারণে বাকি নৌপথগুলোতে লঞ্চ চলাচল করে না।  
 
তবে লঞ্চমালিক নেতারা বলছেন, প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের অভাবে তীব্র নাব্যসংকটের কারণে ১৫টি নৌপথ কার্যত পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। ২৬টি নৌপথ সচল থাকলেও নিয়মিত লঞ্চ চলে মাত্র ২০টিতে। বাকি ৬ নৌপথে অনিয়মিতভাবে লঞ্চ চলাচল করে।  
 
অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, নদী খনন ও নৌপথ ড্রেজিংয়ে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। এ কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে।
 
নৌপথগুলো পরিত্যক্ত হওয়ার পেছনে যাত্রীস্বল্পতার কথা বলা হলেও লঞ্চমালিক নেতারা বলছেন, তীব্র নাব্যসংকট সৃষ্টি হওয়ায় অনেক নৌপথে লঞ্চ চলতে পারছে না। তাদেরও অভিন্ন অভিযোগ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে নৌপথগুলো সঠিকভাবে ড্রেজিং হচ্ছে না।
 
লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নৌ খাতের বড় স্টেকহোল্ডার। কিন্তু নদী ড্রেজিংয়ে আমাদের যুক্ত করা হয় না। কোন রুটের কোথায় নাব্যসংকট বেশি ও কম, সে বিষয়ে আমাদের মতামত নেওয়া হয় না।
 
ড্রেজিংয়ে ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই উল্লেখ করে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, বিআইডব্লিউটিএ নিজের ইচ্ছেমতো ড্রেজিং করায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। ফলে নৌযান মালিকসহ জনগণ এর সুফল পাচ্ছে না। নাব্যসংকটের কারণে অনেক নৌপথে যেমন লঞ্চ চলতে পারে না, তেমনি অনেক গন্তব্যে পৌঁছাতে বাড়তি সময় নষ্ট করে নির্ধারিত দূরত্বের অনেক বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে একদিকে মালিকদের জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়ায় যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে চান না।

নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আন্তরিক। সরকার এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দও দিচ্ছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিলুপ্ত নৌপথ উদ্ধারে দীর্ঘ ১৪ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি।  
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্ব হলো রাজস্ব খাতের আওতায় নিয়মিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথগুলোর নাব্য বজায় রাখা। আর উন্নয়ন খাতের আওতায় করা হয় নদী খনন ও বিলুপ্ত নৌপথ উদ্ধারসহ পলি অপসারণের ব্যয়বহুল কাজগুলো।  

তিনি বলেন, সংস্থাটি গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের এসব কাজ করছে। এজন্য সরকারি তহবিলের কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও আশানুরূপ সাফল্য চোখে পড়ছে না। এর পেছনে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির ঘাটতি, অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি দায়ী।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
টিএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।