ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বাজেটে সিগারেটের খুচরা মূল্য ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
বাজেটে সিগারেটের খুচরা মূল্য ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি

ঢাকা: চলতি অর্থবছর জুড়ে যেহেতু গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, তাই আসন্ন অর্থবছরের বাজটে সকল স্তরে সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে উন্নয়ন সমন্বয় কর্তৃক আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছ। অথচ এই সময়ের মূল্যস্ফীতির হার ৩২ শতাংশ ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেট আরও সহজলভ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর জুড়ে যেহেতু গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে তাই আসন্ন অর্থবছরের বাজটে সকল স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে। ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় সিগারেটের দাম বাড়াতে হবে। এছাড়াও কর আহরণ সহজিকরণের জন্য বাজারে বিক্রি হওয়া সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার পাশাপাশি সিগারেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ২০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সিগারেটে কর প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

নাদভী আরও বলেন, সিগারেটে কার্যকর করারোপ হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, সিগারেট শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকর কর্মসংস্থান হারাবে ইত্যাদি নানাবিধ অপপ্রচার চালানো হয় স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষ থেকে। আগেই বলা হয়েছে, সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার তুলনায় সিগারেট ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। তাছাড়া কার্যকর করারোপ করলে মধ্যম মেয়াদে সিগারেট বিক্রি থেকে পাওয়া কর কমবে না, বরং বাড়বে। কাজেই সিগারেটে কার্যকর করারোপের ফলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাটি পুরোপুরি অমূলক। আসন্ন অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের আলোচনা ও নীতি-ভাবনার সময় এসব অপপ্রচার বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা একান্তভাবে কাম্য।

তিনি আরও বলেন, সিগারেটের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলোর ওপর কার্যকর করারোপও জরুরি। কার্যকরভাবে করারোপ না করা হলে দামবৃদ্ধির ফলে সিগারেট কোম্পানিগুলোর বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত সময়কালে যেহেতু বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং যেহেতু এগুলোর দামের ওপর শতাংশ হিসেবে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা আছে- তাই এ সময়ের ব্যবধানে সিগারেট থেকে আসা বার্ষিক করের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে বছরে মোট সিগারেট বিক্রির পরিমাণ টাকার অংকে ৩৫ হাজার ১৬৭ কোটি থেকে বেড়ে ৪৭ হাজার ৩০৭ কোটি হয়েছে।

হিসেব করে দেখা যায় এ সময়ে সিগারেট উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারিদের পাওয়া মোট অর্থের পরিমাণ বছরে গড়ে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ করে বেড়েছে। যদি কার্যকরভাবে সিগারেটের ওপর করারোপ করা যেতো তাহলে উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারিদের আয় বাড়তো না। বরং তাদের পাওয়া বাড়তি অর্থও সরকার রাজস্ব হিসেবে আহরণ করতে সক্ষম হতো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য এবং তামাক-বিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরের প্রতিটিতে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব আহরণ করেছে, তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর দাবি অনুসারে কার্যকর করারোপ করা গেলে তার তুলনায় ১১ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রাজস্ব আয় করা সম্ভব হতো। ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে প্রতি বছর গড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সকল স্তরের সিগারেটের দাম প্রতি শলাকায় ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং এগুলোর ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ০ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে করে আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আহরণ করা যাবে সিগারেট বিক্রি থেকে। তবে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ালে আগের বছরের তুলনায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যেতো।

উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম, সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ, সাবেক জাতীয় ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।