ঢাকা: বঙ্গবাজারে আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আটকেরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্ট পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এসব কিছুর পেছনে যদি কোনো উদ্দেশ্য থাকে, কোনো নাশকতা থাকে বা কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকেন সেটাও আমাদের কাছে চলে আসবে।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
গত কিছুদিন ধরে ঢাকায় ক্রমাগত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো প্রায় একই রকমের। এ সব ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নাশকতা বা কেউ জড়িত আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হবে। এগুলো নিয়ে আপনারা কী কাজ করছেন জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখছেন গত ৫৮ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও আমরা দেখলাম হিটস্ট্রোকে মানুষ মারা যাচ্ছে। ঢাকায় ৪০ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যেটা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। এই অবস্থায় একটা জিনিস আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের মার্কেটগুলোয় হঠাৎ আগুন লাগছে। আমরা বঙ্গবাজারে আগুন দেখেছি, নবাবপুরে ইলেকট্রিক মার্কেটে আগুন দেখেছি। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়ার পরেও প্রায় প্রতিদিনই আগুন লাগার দৃশ্য দেখছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, হঠাৎ করে একইসঙ্গে এত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে কেন? সেই ঘটনাগুলো আমরা তদন্ত করছি। আমাদের একটা টিম আগে থেকেই কাজ করছিল। যে টিম কাজ করছিল তাদের আগুন লাগার মূল কারণটা কী, উৎসটা কী, তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডে যারা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় তাদের জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন, তাদের ব্যবস্থা করছেন। আপনারা এও দেখেছেন বঙ্গবাজারে আগুন ধরার সময় আমাদের ফায়ার সার্ভিসের ১৪টা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। যে গাড়িগুলো আগুন নেভাবে সেগুলো ভাঙচুর করা হলো। ভিডিওর মাধ্যমে আমরা যাদের চিহ্নিত করেছি ও ধরেছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনে হয়েছে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ভাঙচুরগুলো করেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দলের অ্যাকটিভিস্ট বলে তারা পরিচয় দিয়েছে। এসব কিছু নিয়েই আমাদের তদন্ত চলছে। আমরা আশা করি, তদন্তের পর আমরা আপনাদের আরও কিছু জানাতে পারব।
আপনারা কি এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে নাশকতা মনে করছেন না- জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি তো সেটাই বলছি, আমরা নাশকতা হতে পারে চিন্তা করছি, আমরা মনে করছি কেউ উদ্দেশ্য করে এটা করাতে পারে। তদন্তের পরে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। আমরা এটা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি, আমরা এটা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে সিটি করপোরেশনের ইন্ধন থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তদন্তে নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি উঠে আসবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এখানে কি করবে? বঙ্গবাজারকে অনেক আগেই সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস পরিত্যক্ত মার্কেটে হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও তো তারা কোর্টের একটা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কেট চালাচ্ছিল। সিটি করপোরেশন তাদের কাজ করছে। এগুলো নিয়ে অনেকে হয়তো বিভ্রান্তিকর নিউজ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সবকিছুই আমরা তদন্ত করে দেখছি। ’
ঈদে লম্বা ছুটিতে পেতে যাচ্ছে, এতো লোক থাকার পরও ব্যবসায়ীরা নাজেহাল। তাহলে বন্ধে আপনারা নিরাপত্তার জন্য কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটি মিটিং করেছি। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যাতে বাড়ি যাওয়া মানুষগুলো নির্বিঘ্নে যেতে পারে। সেজন্য রাস্তা-ঘাটগুলো সচল রাখার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প কলকারখানাগুলো যাতে আস্তে আস্তে বা পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়। এসব বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া যেখানে দুর্ঘটনা ঘটবে, সেখানে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সবগুলো মার্কেটে তারা সব সময় সচেষ্ট থাকবে। যাতে করে আগুন না লাগে। ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিস সব মার্কেটে গিয়েছেন। পরীক্ষা করে তারা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারে। আর নিরাপত্তার কথা যেটা বলেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের পুলিশ বাহিনী দেশে যেসব জায়গায় মার্কেট রয়েছে, সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছেন।
৫৮টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব মার্কেট কি করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৮টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে, এই মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা যারা আছেন তারা এটার ব্যবস্থা নেবেন। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মার্কেটগুলো চালাবেন কিনা এটা তারা বলতে পারবেন। আমি মনে করি, অতিসত্বর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেবেন।
কয়টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। একটি ফায়ার সার্ভিসের, একটি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের এবং অন্যটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেখানে সরকারি সব অফিস, কেবিনেটের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত সচিব, এরসঙ্গে কেবিনেট ডিসি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, সিটি করপোরেশনের সদস্যসহ ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেখানে নতুন এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে। এ দুইটি বিষয় যেমন, এই অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কিনা, রাজনৈতিক কোনো ইন্ধন কিনা, সে বিষয়গুলো তাদের দেওয়া হয়েছে। তারা এটা আরও বিস্তারিত তদন্ত করবে এবং দ্রুত প্রতিবেদন দেবে। এজন্য দুই দিন সময় বাড়ানো হয়েছে।
আপনি একটু আগে বললেন ফায়ার সার্ভিসের হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধনের কথা বললেন, আসলে এটা কোন দলের বলে মনে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এটা আরও একটু নিশ্চিত হয়ে জানাবো। তবে প্রাথমিকভাবে জেনেছি তারা একটি রাজনৈতিক দলের কোনো গোষ্ঠী। আমরা আরও তদন্ত করার পর জানাতে পারবো।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো চক্রান্ত কিনা? ২০১৩-১৪ সালের পুনরাবৃত্তি কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সব কিছু চিন্তা করছি, সেজন্য তদন্ত করছি। এ ঘটনা নাশকতা কিনা সেটা যেমন দেখছি, ২০১৩-১৪ সালের বাসে, গরুর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখেছেন, নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখেছেন। সেগুলো জনসাধারণ এখনও ভোলে নাই। সে ধরনের আরও একটা ঘটনা ঘটাতে চায় কিনা এ ধরনের প্রশ্ন আজকে অনেকের মনে। আমরা সেগুলো দেখছি, তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
জিসিজি/এসআইএ