ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বনপাড়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সেই কলেজ অধ্যক্ষের স্বজন। এ নিয়ে কলেজটির ভেতরে বাইরে তোলপাড় চলছে।
বলা হচ্ছে, অধ্যক্ষ বিধি বিধানের কোনো তোয়াক্কা না করে কলেজে নিজের স্ত্রী, পুত্র ও স্বজনদের চাকরি দিয়েছেন। এতে কলেজটি এখন অধ্যক্ষের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে ৫০ শতক জমিতে বনপাড়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজটি স্থাপিত হয়। এরপর ২০১০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক এবং গত বছরের পহেলা জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এমপিওভুক্ত হয়। ওই সময় নিম্ন মাধ্যমিকের শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন অধ্যক্ষ।
ফলে বাস্তবে কিছু না থাকলেও কাগজে কলমে প্রভাষক, শিক্ষক, ল্যাব সহকারী, অফিস সহকারী, পিয়ন, নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে লোক দেখিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে এমপিওভুক্ত করতে আবেদন করেন অধ্যক্ষ। ওই আবেদনে ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক পদে শরিফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক পদে রাইহানা ইয়াসমিন, মোফাজ্জল হোসেন, মো. রেজাউল ও ল্যাব সহকারী পদে সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দেখানো হয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এমপিওভুক্ত হয়ে গেলে তাদেরকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একই পদে অন্য ব্যক্তিদের চাকরি দিয়েছেন অধ্যক্ষ। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই অধ্যক্ষের স্ত্রী, ছেলেসহ ঘনিষ্ঠ স্বজন।
তারা হলেন- আয়া পদে অধ্যক্ষের স্ত্রী ইসমত আরা, স্ত্রীর বড় ভাই সহকারী শিক্ষক (আইসিটি) মোস্তফা কামাল, ছেলে ইমরুল কায়েস (ল্যাব সহকারী), ছোট বোন আয়শা খাতুন (কৃষি শিক্ষক) ও বোনজামাই আজিজুল হক সহকারী শিক্ষক (বাংলা), দুই ভাগ্নি শেফালি বেগম (ল্যাব সহকারী) ও ঝর্ণা আক্তার (অফিস সহায়ক), ভাগ্নি জামাই তরিকুল ইসলাম (নৈশ প্রহরী) এবং বোনের ছেলে আবু নাঈম (পরিচ্ছন্নতাকর্মী)।
ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমার কাছ থেকে দশ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছিল অধ্যক্ষ। প্রায় দশ বছর চাকরি করেছি, ওই সময় বিভিন্ন অজুহাতে কয়েক ধাপে আরও কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ঘোষণা হলে আমাকে বাদ দিয়ে আমার পদে আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষ তার পরিবারের লোকজনসহ স্বজনদের চাকরি দিয়েছেন। অন্যদের দিয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। এটির সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন মনে করে ময়মনসিংহের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে তদন্ত ধামাচাপা রয়েছে।
মো. রেজাউল নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ঘুষ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সম্ভব না। এজন্য আমিও সরল বিশ্বাসে অধ্যক্ষকে টাকা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করে কয়েক বছর বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি। এরপর কৌশলে আমাকে সরিয়ে আ. ছোবাহান নামে অপর এক ব্যক্তিকে আমার স্থলে চাকরি দেওয়া হয়।
সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক নারী জানান, পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ল্যাব সহায়ক পদে চাকরি পেয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকদিন পরেই তা অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ। পরে আমার পদে তাহমিনা সুলতানা শাম্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে বাংলানিউজের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বনপাড়া আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এমদাদুল হক।
তিনি বলেন, নিয়োগ দেওয়ার নামে কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। আমার আত্মীয়-স্বজনরাও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। আর যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, মূলত তাদের নিয়োগপত্রই জাল। কারণ ওই নিয়োগপত্রের কোথাও আমার স্বাক্ষর নেই।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ পরিচালক আবু নূর মো. আনিসুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অধ্যক্ষ এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রতিবেদনে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এসএএইচ