রাজবাড়ী: রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌরুট ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন নদী পার হয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়।
ঈদে এই নৌরুটের চাপ স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা বেড়ে যায়। তাই আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের প্রস্তুতি।
এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে ২০টি ফেরি ও ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। সেই সঙ্গে ঘাটকে যানজটমুক্ত রাখতে ঈদের আগে ৩ দিন ও পরের ৩ দিন মিলিয়ে ঈদের দিনসহ মোট ৭ দিন অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষ যাতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেজন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন ও ঘাট কর্তৃপক্ষ। যাত্রাপথে ভোগান্তি, যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সড়কে যানজট নিরসনসহ ঘাট এলাকায় সার্বক্ষণিক কঠোর নজরদারী করবে প্রশাসন।
গত বছর ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যাত্রী ও যানবাহনের ভোগান্তির অন্যতম নৌপথ ছিল দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই রুটে ওই সময় ৩০ মিনিটের পদ্মানদী পাড়ি দিতে ঘাটে আসা যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেরির জন্য। পদ্মা সেতু চালু হবার সুফলে ফেরির জন্যে এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। সেই সঙ্গে কমেছে ভোগান্তি, স্বস্তি ফিরেছে ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের মধ্যেও।
এই নৌরুট দিয়ে পারাপাররত যাত্রী ও চালকরা জানান, পূর্বে এই রুটে যাতায়াত করতে দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন স্বল্প সময়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী ছুটলেও যানবাহন ও যাত্রীদের যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এখন প্রতিনিয়ত ১২ থেকে ১৪টি ফেরি চলাচল করলেও পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে ছোট-বড় ২০টি ফেরি চলাচল করবে। যানজটমুক্ত পরিবেশ ও ভোগান্তি ছাড়াই ঘরমুখো মানুষ বাড়ি পৌঁছাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বাড়লেও কোনো দুর্ভোগ হবে না জানিয়ে মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন আরও বলেন, বর্তমানে ৩টি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ৩টি ঘাটে রয়েছে ৬টি পকেট। এই ৬ পকেটে ছয়টি ফেরি ভিড়তে পারবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দৌলতদিয়া ঘাট ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৩৩টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে। তবে যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা মেনেই পারাপার করা হবে।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) জেএম সিরাজুল কবির বাংলানিউজকে জানান, আসন্ন ঈদে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীতেও থাকবে নৌ পুলিশের টহল। লঞ্চে ও ফেরিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে দেওয়া হবে না। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঈদ উপলক্ষে আগে-পরে ৩ দিন করে মোট ৭ দিন অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে হাইওয়ে পুলিশ মাঠে থাকবে।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, ঈদে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকার ঘটনা মোকাবেলা করতে মাঠে থাকবে পুলিশ। এছাড়াও ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে।
এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তির হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
এনএস