রাজশাহী: আপাতত স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ধকল কাটলো রাজশাহীবাসীর। বৃষ্টি না হলেও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে থাকা থার্মোমিটারে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (অতি তীব্র তাপপ্রবাহ) থেকে ৩৮ ডিগ্রির ঘরে নেমেছে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ।
অনেক দিন পর রোববারের সকালটা শুরু হয় মেঘলা আকাশ দেখেই। এরপর কখনও রোদ, কখনও মেঘ। রোদ আর মেঘের এই লুকোচুরি খেলা দেখেই ঈদের আনন্দ উপভোগের জন্য বাইরে বের হয়ে পড়ে শিশু, কিশোর ও তরুণসহ সব বয়সের বিনোদনপ্রেমী মানুষ। তাই রাজশাহী নগরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় আজ ঢল নেমেছে সব বয়সের মানুষের। বেলা যত বিকেলের দিকে গড়াচ্ছে ভিড় ততই বাড়ছে। পূর্বের সূর্য পশ্চিমে ঢলতেই অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের নতুন পোশাকে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন।
আজ সকাল থেকে তাই রাজশাহীর শহীদ জিয়া শিশুপার্ক, বড়কুঠি পদ্মার পাড়, তার অদূরেই থাকা সীমান্ত অবকাশ, সীমান্তে নোঙর এবং ভদ্রা শিশুপার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ছে। নগরের প্রধানতম বিনোদনকেন্দ্র শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের জন্য এখনও রয়েছে বন্ধ। এতে বাড়তি চাপ পড়েছে শিশুপার্কে।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে ঈদের খুশিতে সবাই মাতোয়ারা। ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শেষ হচ্ছে। আর তাপপ্রবাহ অন্য কয়েক দিনের তুলনায় আজ একটু কম। তাই প্রাণভরে ঈদের অনাবিল আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। রাজশাহীর বাইরে থেকেও মানুষ আসছেন। শিশুপার্কে গিয়ে বড়রাও যেন আজ শিশুতোষ মন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। শিশুদের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যেন নিংড়ে তুলে নিচ্ছেন জীবনের ফেলে আসা শৈশব ও কৈশোরের সেই পরমানন্দগুলো।
আর ঈদের টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে পাল্টে গেছে ছোট ছোট যানবাহনে ঠাসা এই প্রাচীন নগরের চিত্রও। প্রধান প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন কোলাহলে ভরা। বিনোদন পিপাসুদের কল্যাণে আজ যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর এই শিশুপার্ক।
এমন রুক্ষ আবহাওয়াও আজ বিনোদন পিপাসুদের ঘরের চার দেয়ালে আটকাতে পারেনি। ঈদের আনন্দ উপভোগের করতে একযোগে বেরিয়ে পড়েছেন। তাই রিকশার শহরে আজ বেড়ানোর অন্যতম বাহন রিকশার কদর বেড়েছে দ্বিগুণ। সুযোগ বুঝে তারাও যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন কেউ কেউ।
শিশুপার্কের সামনে কথা হয়- নিউমার্কেট সুলতাবাদ এলাকার অধীবাসী নূর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার এলাকা থেকে অন্য সময় এই শিশুপার্ক পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ৪০/৫০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের অজুহাতে ৭০/১০০ টাকা ভাড়া হাঁকছেন রিকশাচালকরা। আর আজই নয়, রমজান মাসের শুরু থেকেই ঈদের কথা বলে বাড়তি ভাড়া চাইছেন তারা। বিশেষ করে ঈদের বাজার ধরতে বাইরের উপজেলা থেকেও মৌসুমী রিকশাচালকরা শহর এলাকায় ঢুকে পড়েছেন। তারাই মূলত ভাড়া নিয়ে বেশি ঝামেলা করছেন বলেও অভিযোগ করেন নূর আলম।
এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন বেশ কয়েকজন রিকশাচালক। আলিফ হোসেন, জাবেদ আলী ও সুজন নামের তিনজন রিকশাচালক বলেন, ঈদে বকশিস হিসেবে এমনিই সবাই ভাড়া একটু বেশি দেন। তাই কারও কাছে জোর করা হয় না। এই কাঠফাটা রোদে দিনভর রিকশা চালান। সবকিছুরই দাম বেশি। এখন সবাই যদি একটু বেশি টাকা না দেন তাহলে তারাই বা পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে ঈদ করবেন এমন পাল্টা প্রশ্ন করে তারা।
এদিকে ঈদ উৎসবের এমন শত ঝুট-ঝামেলা পেরিয়ে আসা মানুষগুলো শিশুপার্কে ঢোকার পরই যেন ভুলে যান সব ধরনের তিক্ততা। বাইরে সমস্যা যাই থাক ভেতরে ঢোকার পর সবার চোখেমুখেই দেখা যায় খুশির ঝিলিক।
ছয় বছরের ছোট্ট শিশু ফারিহাকে নিয়ে রাজশাহীর শহীদ জিয়া শিশুপার্কে আসা ফাহিম হাসান বলেন, ছুটির কারণে শহরে সেই চিরচেনা যানজট নেই। আর ছুটিও শেষ হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ আবহাওয়া একটু ভালো। তাই ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শিশুপার্কে বেড়াতে এসেছেন। আর পার্কে আজ বেশ ভিড়। তাই খুব ভালো লাগছে বলেও জানান।
শিশুপার্কে বেড়াতে আসা শালবাগান এলাকার আরিফ, রিফাত, সজীব ও জিয়ান নামের চার কিশোর জানায়, রাজশাহীর মূল আকর্ষণ ছিল কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। উন্নয়ন কাজের জন্য গেল ৩ বছর থেকে এটি বন্ধ। সেজন্য তারা এই শিশুপার্কে এসেছেন। এখানেও শিশু-কিশোদের জন্য অনেক ধরনের রাইডস রয়েছে। তাই তারা বন্ধুরা মিলে এখানে বেড়াতে এসেছে। আর আনন্দও হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৩
এসএস/এএটি