ঢাকা: অসংখ্য গুণগ্রাহী, সহকর্মী, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের শোকসন্তপ্ত উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠান।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে সদ্যপ্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজ বাসভবনে পরিবারের পক্ষ থেকে এ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর রূহের মাগফেরাত কামনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া। তার আত্নার শান্তি প্রার্থনায় পাঠ করা হয় বেদ ও গীতা, ত্রিপিটক এবং বাইবেলের বেশ কিছু অংশ। দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা, জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে নানা পদক্ষেপকে।
এসময় বক্তব্য রাখেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফরিদা আখতার, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বোন সেলিনা চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যরা।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে স্মরণ করে তারা বলেন, দেশ ও দশের পক্ষে তার অকুতোভয় অবস্থান আমাদের জন্য অনুসরণীয়। দেশের জনস্বাস্থ্য গণমুখী করে গড়ে তুলতে তিনি আমৃত্যু কাজ করেছেন। মৃত্যুর আগে দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
বাদ আসর দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনসহ সমাজের সবস্তরের মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল রাজধানীতে নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন কীর্তিমান এ মানুষটি। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো' (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড