ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যাত্রী বেশে ছিনতাই, চালককে হত্যা করে ইজিবাইক নিয়ে চম্পট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
যাত্রী বেশে ছিনতাই, চালককে হত্যা করে ইজিবাইক নিয়ে চম্পট

ঢাকা: ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ একটি চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব-১০। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় রেলওয়ে ওভারব্রিজ থেকে ইজিবাইক চালক শাহাদাতকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার ঘটনায় এ চক্রকে আটক করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন মো. জুয়েল বেপারী (২৭)। তার সহযোগীরা হলেন- মো. সাজ্জাদ শেখ (২৩), মো. ইসমাইল হোসেন (২৩), মো. লিমন মাতুব্বর (২১), মো. সোহাগ (২০), রোমান শিকদার (১৮) ও মো. জাকির (৪০)।

তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) থেকে শনিবার (২৯ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটকের পর র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, মূলত ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় তারা ঘুরতে বের হয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় রেলওয়ে ব্রিজের ওপরে প্রথমে চালক শাহাদাতকে মারধর করলে সে অচেতন হয়ে যায়, এতে জুয়েলসহ বাকিরা ভুক্তভোগীতে ধাক্কা দিয়ে ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দেয়। এরপর ইজিবাইকটি নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে ইজিবাইকটি সিরাজদিখান এলাকার মো. জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করে দেয় হত্যাকারীরা।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।

র‌্যাব-১০ এর সিও বলেন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও তার সহযোগীর তথ্য অনুযায়ী শনিবার ভোরে সিরাজদিখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. জাকিরকে আটক করা হয়। জাকিরের গ্যারেজ থেকে ছিনতাইকৃত ওই ইজিবাইকসহ আরএ ৫টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা ইজিবাইক চালক শাহাদাত হাওলাদার (৩০)। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার একটি গ্যারেজের ভাড়া করা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।  

প্রতিনিদের মতো ঈদের পরদিন বিকেল ৪টার দিকে ওই গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হন তিনি। ওইদিন রাতে শাহাদাত আর বাসায় ফেরেনি। তার পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পায়। এতে চিন্তিত হয়ে শাহাদাতকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে, কিন্তু পায় না।

পরদিন ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে শাহাদাতের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জানান মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভারব্রিজের নিচে একটি মমরদেহ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে শাহাদাতের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহাদাতের মরদেহ শনাক্ত করেন। ওই সময় ভুক্তভোগীর মাথা, মুখ ও কপালে রক্তাক্ত ফোলা জখম ছিল। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সিরাজদিখান থানা পুলিশ এসে শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়।

ঘটনার পর নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাতনামা ২-৩ ব্যক্তিকে আসামি করে দুস্যুতাসহ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও জড়িত সাতজনকে আটক করি।  

হত্যাকাণ্ড ঘটে যেভাবে

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাসের বরাতে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন মাওয়া ঘুরতে যাবে বলে ৩২০ টাকা ঘণ্টা চুক্তিতে একটি ইজিবাইক ভাড়া করেন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসলাইল ও সোহাগ। ঘুরতে ঘুরতে তারা পরিকল্পনা করে ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে। কিন্তু সেই দিন তাদের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই ঈদের পরদিন ১ হাজার ৯০০ টাকায় ওই ইজিবাইকটি ভাড়া করেন তারা।

পরের দিন ২৩ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী শাহাদাতকে মোবাইল ফোন করে কদমতলী লাবনী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে আনে। সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে উঠে এবং কিছুক্ষণ পর ইসমাইলকে ফোন দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন কালীগঞ্জ, খালপাড় অবস্থান করতে বলে। কালীগঞ্জ এলাকা থেকে ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে তারা মাওয়ার উদ্দেশে রওনা করেন। পরে তারা শ্রীনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। ঘুরাফেরা শেষে ফেরার পথে আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে সিরাজদিখান থানাধীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভারব্রিজের উপরে এসে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করতে থাকে। তার কিছুক্ষণ পর তারা আশপাশে কোনো লোকজন দেখতে না পেয়ে জুয়েল, সাজ্জাদ, ইসমাইল ও লিমন শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিলঘুষি মারতে থাকে। এতে শাহাদাত চিৎকার করলে জুয়েল তার মুখ চেপে ধরেন। মারামারির একপর্যায় শাহদাত অজ্ঞান হয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা শাহাদাতকে ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আটকরা বিভিন্ন সময়ে ইজিবাইক বা অটোরিকশা ভাড়া করে তাদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ইজিবাইক/অটোরিকশা ছিনতাই করতেন। এরপর তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গ্যারেজ মালিক মো. জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করে দিতেন।  

এছাড়া আটক জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানান, তিনি ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি আসামিদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনে নেয়৷ পরে ইজিবাইকের রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিলেন।  

আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওই র‌্যাব কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।