ঢাকা: সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। সোমবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে উপলক্ষে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে তারা এ দাবি জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ১০ দাবি হলো- নিম্নতম মজুরি ২৩,০০০ টাকা করা; প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা; অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং আই এলও সনদ ১৮৯ অনুস্বাক্ষর করা; কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা রোধ করতে আইএলও সনদ ১৯০ অনুস্বাক্ষর করা; সকল কারখানায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে অ্যান্টি হ্যারেজম্যান্ট কমিটি গঠন করা; শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা; ব্র্যান্ড অ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষর কর ও প্রাইজরেট বৃদ্ধি করা; সকল শ্রমিকদের জন্য মৃত্যুভয়হীন নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা; ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা; বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালায় সন্নিবেশিত শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী বিধিসমূহ বাতিল পূর্বক নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে শ্রমিকদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, যা জাতির অগ্রগতির অন্যতম শক্তি। কিন্তু শ্রমিকরা সবচেয়ে সস্তায় কাজ করে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের জীবন যাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী। এছাড়া দুর্বল শ্রম আইনের কারণে শ্রমিকদের অধিকার অনেকক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা, মজুরি বৈষম্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা না পাওয়াসহ নানাবিধ শোষণ-বঞ্চনার শিকার।
দেশের পোশাক শিল্পসহ অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্রগুলোয় ও উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী নানাভাবে মে দিবস মর্যাদার সহিত পালিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আজও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রমিকদের অধিকার। তাই শ্রমিকদের প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এই ব্যাপারে মালিক শ্রেণি ও সরকারকে বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় পোশাকশিল্পের সকল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যৌথ দর কষাকষির পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকেরা বিদেশে যেমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আবার দেশে এসেও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এতে করে তাদের অধিকার ব্যাপকহারে লঙ্ঘন হচ্ছে। সে কারণে আমাদের আরও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
শ্রমিকদেরকে শ্রমিক হিসাবে নয় মানুষ হিসাবে দেখতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শ্রমিকদের উপর নানারকম নির্যাতন রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং জাতি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য বলে জানান শ্রমিকরা।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৩
এসসি/এমজে